প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহতায়ালার বিশেষ দয়ায় পবিত্র কাবা থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে কুদরতি এই পানি পবিত্র উৎস চালু হয়। চালুর কয়েক শতাব্দী পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় এর পানি প্রবাহ।
বিদায় হজের সময় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জমজম কূপের কাছে যান এবং বড় এক বালতি পানি ভর্তি করার আহ্বান জানান। তিনি সেই পানি দিয়ে অজু করেন এবং বলেন, ‘হে বনি আবদুল মুত্তালিব! তোমরা পানি তোল, তোমরা পানি না ওঠালে অন্যরা তোমাদেরকে ওই কাজ থেকে বঞ্চিত করবে। ’ এরপর তিনি দাঁড়িয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অনেকক্ষণ পানি পান করেন। তারপর মাথা ওপরের দিকে তুলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেন।
এভাবে নবী করিম (সা.) তিনবার পানি পান করেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘জমিনের ওপর সর্বোত্তম পানি হচ্ছে, দ্বীনদারের পানীয় জমজমের পানি। ’ -ইবনে হিব্বান
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি হজরত জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে। ’ -ইবনে মাজা
জমজম কূপ প্রথমে খোলা অবস্থায় ছিল। তখন কূপ থেকে বালতি দিয়ে পানি তোলা হতো। জমজমের মুখ থেকে ৪০ হাত গভীর পর্যন্ত কূপের চারপাশ প্লাস্টার করা। এর নিচে পাথরকাটা অংশ আছে আরও ২৯ হাত। এসব পাথরের ফাঁক দিয়েই তিনটি প্রবাহ থেকে আসে পানি। একটি কাবার দিক থেকে, একটি সাফা পাহাড়ের দিক থেকে এবং আরেকটি মারওয়া পাহাড়ের দিক থেকে।
সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী পর সৌদি সরকার আধুনিক মেশিনের সাহায্যে জমজম কূপ নানা সময় খনন করেন। তবে হজ ও ওমরার সময় লোক সমাগম বেশি হওয়ায় এখন আর জমজম কূপ দেখা যায় না। বর্তমানে জমজম কূপ কাবা চত্ত্বরের নিচে। এখান থেকে অনেক দূরে মেশিনের সাহায্যে আজিজিয়া এলাকায় স্থাপিত বিশেষ প্ল্যান্ট থেকে পানি সরবরাহ করা হয়।
সম্প্রতি জমজম কূপের সংস্কার শুরু করেছে সৌদি সরকার। দুই পবিত্র মসজিদের চেয়ারম্যান ও খতিব শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসি জানিয়েছেন, জমজম কূপের মেরামতে প্রায় সাত মাসের মতো সময় লাগবে। শুরু করা সংস্কার কাজ আগামী রমজানের আগেই শেষ হবে।
নতুন করে সংস্কারের ফলে এর পানি প্রবাহ বাড়বে, তা ছাড়া কূপের কাছাকাছি এলাকাকে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সৌদি গেজেট জানিয়েছে, জমজম কূপকে বিশ্বের প্রাচীনতম কূপ বলে ধারণা করা হয়। এই কূপ থেকে প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে আঠারো লিটার পানি পাওয়া যায়। সৌদি আরবের একদল বিশেষজ্ঞ জমজম কূপের পানির পরিমাণ, মান, কূপের গভীরতা ও তাপমাত্রার বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন।
মক্কার মসজিদে হারামে প্রচুর কন্টেইনার ও ট্যাপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়। মক্কা থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দূরের শহর মদিনায় প্রতিদিন ট্যাঙ্কারে করে অন্তত ১২০ টন জমজমের পানি নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিবহনের সময় সেই পানি যাতে কোনোভাবে দূষিত না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়ালা রাখা হয়। এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি, মক্কা ও মদিনায় জমজমের পানির সংকট চলছে। তবে এই পানি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/