ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমত, আরাফাত। ছবি: বাংলানিউজ

আরাফাত, মক্কা (সৌদি আরব): ইসলামের ইতিহাসের মূলকেন্দ্র মক্কার আশেপাশেই রয়েছে কয়েকটি পবিত্র স্থান। আরাফাত, মিনা, মুজদালেফা ইত্যাদি প্রান্তরময় স্থানগুলো হজের আনুষ্ঠানিকতার অন্তর্ভুক্ত এবং দর্শনার্থীদের কাছে সব সময়ের জন্য পবিত্র ও আকর্ষণীয়।

মিনার তাঁবুতে অবস্থান, মুজদালেফায় রাত্রি যাপন এবং আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত থাকা হজের পালনীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীর অংশ।

এসো কল্যাণের পথে, এসো শান্তির পথে

হজের সময় যে প্রান্তর থাকে লোকে লোকারণ্য, বছরের অন্য সময় সেগুলোতে ভিড় করে ওমরাহে আগত নানা দেশের পুণ্যার্থীরা।

হজের সময় ভালো করে দেখার ফুসরত পাওয়া যায় না বলে অন্য সময় মানুষ ঘুরে ফিরে দেখে স্মৃতিময় এলাকাগুলো।

আরাফাতের ময়দানের শীর্ষে 'জাবালে রহমত' বা 'করুণার পাহাড়', যেখানে হজের নির্দিষ্ট দিনটিতে দোয়া কবুল হয়।

মসজিদে নিমেরা।  ছবি: বাংলানিউজসোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে পাহাড় ঘেরা আরাফাতের প্রান্তরে গিয়ে দেখতে পেলাম অনেক মানুষের উপস্থিতি। কেউ পাহাড়ে চড়ছেন। কেউ নেমে আসছেন। পার্বত্য বাতাসের ঝাপ্টা আর তেজহীন রোদের প্রকোপ অগ্রাহ্য করে মানুষ ছুটে চলেছেন বহু ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী আরাফাতের ময়দানের নানা প্রান্তে।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতি বিজড়িত আরাফাত বিশিষ্ট হয়ে আছে 'বিদায় হজের ভাষণ'- এর জন্য। মানবাধিকার ও মনুষ্যত্বের চরম বিকাশ ঘটিয়ে ছিলেন মহানবী সেই ঐতিহাসিক বক্তব্যে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে এনেছিলেন সাম্যের মহাবার্তা। মানবতার নবী ইসলাম ধর্মের মানবিক চেতনাকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বময়।

আরাফাতের ময়দানেই মিলন ঘটেছিল হযরত আদম ও মা হাওয়া (আ.)-এর। বেহেশত থেকে দুনিয়াতে এসে তারা আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার ক্ষমা ও রহমত প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় মিলিত হন আরাফাতের ময়দানে।

আরাফাতের এক প্রান্ত মসজিদে নিমেরা, যেখান থেকে 'উকুফে আরাফাহ' হজ্জের দিন খুতবা (ভাষণ) প্রদান করা হয় বিশ্ব মানবতার শান্তি, কল্যাণ কামনা করে। চমৎকার স্থাপত্য শৈলীর বিশাল মসজিদের নয়ন কাড়া সৌন্দর্য সবাইকে মোহিত করে।

মক্কার মাত্র দশ মাইলের মধ্যে আরাফাত, মিনা, মুজদালেফা ইসলামের জীবন্ত ইতিহাসের প্রত্যক্ষ নমুনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হযরত ইবরাহিম, হযরত ইসমাঈল, মা হাজেরা (আ.) ত্যাগ ও নিবেদনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তি মিশনের দিনগুলোকে চোখের সামনে উদ্ভাসিত করে। মানবতাকে ডাক দেয় সাম্য, কল্যাণ, শান্তি ও কল্যাণের সাফল্যময় পথে।

বিশ্বের হানাহানি, রক্তপাত, হিংসা, বিদ্বেষ, শোষণ-নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে ইসলামের বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের আওয়াজ ভেসে আসে আরাফাতের প্রান্তর থেকে। কান পাতলেই ভেসে আসে মানবতার নবীর (সা.) মহামানবিক আহ্বান। চরম কৃচ্ছ্বতা ও ত্যাগের বিনিময়ে যিনি নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠা করেছিল কল্যাণ ও মানবিকতার উজ্জ্বলতম উদাহরণ।

রক্তাক্ত ও বিপন্ন বিশ্বের সামনে দাঁড়িয়ে বার বার সেই শাশ্বত শান্তির প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। পৃথিবীর পথে পথে, দেশে দেশে শক্তি ও অসাম্যের দানবীয় আক্রমণে আহত, নিহত, বাস্তুচ্যূত, ক্রন্দররত নারী, পুরুষ, শিশুদের রক্ষায় আজ শান্তি ও সাম্যের বড় বেশি প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এমপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।