ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম আজান হয় কাইরুয়ান মসজিদ থেকে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম আজান হয় কাইরুয়ান মসজিদ থেকে তিউনিসিয়ার কাইরুয়ান জামে মসজিদ

তিউনিসিয়া আফ্রিকার উত্তর উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত রাষ্ট্র। দেশটির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত তিউনিস দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

আয়তনের দিক থেকে তিউনিসিয়া অন্যান্য উত্তর আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলির তুলনায় খর্বাকৃতির। তিউনিসিয়া আফ্রিকার উত্তরতম দেশ।

১৮৮১ সাল থেকে তিউনিসিয়া ফ্রান্সের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৫৬ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। প্রায় সব তিউনিসীয় নাগরিক মুসলিম।  

তিউনিসিয়া পর্যটকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া, নয়নাভিরাম বেলাভূমি, বিচিত্র ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, সাহারার মরূদ্যান এবং সুরক্ষিত প্রাচীন রোমান প্রত্নস্থলগুলো বিখ্যাত।  

তিউনিসিয়ার একটি বিখ্যাত মসজিদের নাম কাইরুয়ান জামে মসজিদ। ৫০ হিজরি সালে সাহাবি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার উকবা বিন নাফি (রহ.) ৯ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর মসজিদটি নির্মাণ করেন।  

তিউনিসিয়ার কাইরুয়ান শহরও প্রতিষ্ঠা করেন উকবা বিন নাফি। তিনি এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে কাইরুয়ান জামে মসজিদকে উকবা জামে মসজিদও বলা হয়।  

এই মসজিদ থেকে আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম আজান উচ্চারিত হয়েছিল বলে- ইসলামের ইতিহাসে এটির গুরুত্ব অপরিসীম।  

শুরুতে এই মসজিদের আয়তন ছিল অনেক ছোট এবং অত্যন্ত সাধাসিধেভাবে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন শাসনামলে মসজিদের আয়তন ও শান-শওকত বৃদ্ধি পায়। মসজিদটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, বাইরে থেকে এটি দেখলে মনে হবে একটি শক্তিশালী দুর্গ মসজিদটিকে বেষ্টন করে রেখেছে।  

কাইরুয়ান মসজিদে ৫টি গম্বুজ ও ৯টি প্রবেশ দ্বার রয়েছে। এই মসজিদের মেহরাবের কাছে নীচু ছাদবিশিষ্ট আরেকটি কক্ষ রয়েছে। যার নাম মাকসুরা।  
তিউনিসিয়ার কাইরুয়ান জামে মসজিদ
খলিফাদের নামাজ আদায় এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই বিশেষ কক্ষ মাকসুরা নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের দেখা যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে এক জামাতে নামাজ আদায় করা যেত।  

ইসলামের ইতিহাসে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) সর্বপ্রথম দামেস্কের উমাইয়া জামে মসজিদে মাকসুরা নির্মাণ করেন।  

কাইরুয়ান জামে মসজিদের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও পাথর দিয়ে। এই প্রাচীরের ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে বড় বড় স্তম্ভ। এই মসজিদের মিনারে যে চমৎকার কারুকাজ রয়েছে, আফ্রিকার অন্য কোনো মসজিদে তার নজির পাওয়া যায় না।  

আয়তাকার এসব কারুকাজ তিন স্তরবিশিষ্ট। এর দ্বিতীয় স্তরের কারুকাজ প্রথম স্তরের চেয়ে ছোট এবং তৃতীয় স্তরেরটি দ্বিতীয় স্তরের চেয়ে ছোট। কিন্তু নীচে দাঁড়িয়ে মিনারের দিকে তাকালে তিন স্তরের কারুকাজই সমান মনে হয়।  

কাইরুয়ান জামে মসজিদের মিম্বর খ্রিস্টিয় নবম শতাব্দিতে নির্মিত হয়েছে এবং এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পুরনো মিম্বর হিসেবে পরিচিত।  
কাইরুয়ান জামে মসজিদের ভেতরের অংশ
মসজিদের মেহরাবের একাংশে টাইলস বসানো এবং টাইলসের ওপরে রয়েছে খোদাই করা ক্যালিওগ্রাফি। এ থেকে বোঝা যায়, এক হাজার বছর আগেও তিউনিসিয়ায় টাইলসের প্রচলন ছিল।  

সার্বিকভাবে এই মসজিদটি আফ্রিকা মহাদেশে ইসলামি স্থাপত্যশিল্পের একটি অনন্য নিদর্শন হয়ে রয়েছে। এটা দেখতে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।