ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

আলো ঝলমলে কবর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
আলো ঝলমলে কবর ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মের খেদমত ও প্রচার-প্রসারের কাজ যে কেউই করুক, তার একটা মর্যাদা ও অবস্থান রয়েছে। বিভিন্ন কাজকে অনেকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু দৃশ্যত সাধারণ বলে মনে হয়—এমন কাজকেও আল্লাহর রাসুল (সা.) গুরুত্ব দিতেন এবং কর্তাকে স্মরণ রাখতেন।

প্রিয় নবী (সা.)-এর যুগে এক কালো নারী সাহাবি ছিলেন। নাম ‘খারকা’।

তার উপাধি ছিল ‘উম্মে মিহজান’। ওই নারী লেখাপড়া জানতেন না; অর্থবিত্তও তেমন ছিল না। তবে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য তিনি ইসলামের সেবার লক্ষ্যে যেকোনো ভূমিকা রাখার মনোবাসনা পোষণ করতেন। একবার তিনি খেয়াল করলেন, অন্য কোনো কাজ করতে না পারলেও মসজিদ পরিষ্কার করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটা তিনি অনায়াসে করতে পারেন।

সে লক্ষ্যে উম্মে মিহজান খেজুরের পাতা দিয়ে ঝাড়ু তৈরি করেন এবং তা দিয়ে নিয়মিত মসজিদে নববি পরিষ্কার করতে থাকলেন। মসজিদে নববিতে যখনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজন অনুভব করতেন, তখন তিনি সেখানে পৌঁছে যেতেন। তিনি মসজিদে ঝাড়ু দেয়াকে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করার মাধ্যম মনে করতেন।

বাহ্যিকভাবে যদিও কাজটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। যারা এধরনের কাজ করে অনেক সময় সমাজেও তাদের বিশেষ কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না।
তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই নারী সাহাবির সাধারণ কাজেটিকে গুরুত্ব দিলেন এবং তার কাজের মূল্যায়ন করেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কয়েকদিন ওই নারী সাহাবিকে মসজিদ পরিষ্কার করতে দেখলেন না, তখন তিনি সাহাবিদের বললেন, ‘যে নারীটি আমাদের মসজিদ পরিষ্কার করতেন, ঝাড়ু দিতেন, তিনি কোথায় গেলেন? কয়েকদিন ধরে তাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ওই নারী তো ইন্তেকাল করেছেন।

সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-কে জানানোটা প্রয়োজনবোধ করেননি। তারা ভেবেছিলেন, রাতের বেলা বৃদ্ধ এক নারী মৃত্যুবরণ করেছে। রাসুল (সা.)-কে তার ব্যাপারে জানালে, জানাজায় শরিক হতে কষ্ট হবে। তাই তারা নিজেরাই জানাজার নামাজ পড়িয়ে তাকে দাফন করেছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন,  ‘তোমরা আমাকে সে সংবাদ দাওনি কেন?’ এরপর আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তার কবর কোথায়? তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে? আমাকে একটু দেখিয়ে দাও’ সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-কে উম্মে মিহজানের কবর দেখিয়ে দিলেন।

দুনিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ত লোক, নবীকুলের শিরোমণি রাসুল (সা.) নিজের সব ব্যস্ততা সত্ত্বেও হেঁটে কবরস্থানে গিয়ে উম্মে মিহজানের কবরের পাশে দাঁড়ালেন। সাহাবায়ে কেরামও সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন।

উম্মে মিহজানের কী সৌভাগ্য! আল্লাহর রাসুল (সা.) তার কবরে জানাজার নামাজ পড়েন। তার মাগফিরাতের জন্য দুআ করেন। জানাজার নামাজ শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, হে আমার সঙ্গীরা! নিঃসন্দেহে এসব কবর বাসিন্দাদের জন্য ভীষণ অন্ধকারাচ্ছন্ন।
তাদের উপর আমি জানাজার নামাজ পড়ার কারণে সেগুলো আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই আলোকস্নাত করে দেন। ’

লেখক, অনুবাদক, বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ, সৌদি আরব

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
এমএমইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।