ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ভাষা ব্যবহারে শালীনতা রক্ষা মুমিনের ভূষণ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
ভাষা ব্যবহারে শালীনতা রক্ষা মুমিনের ভূষণ ছবি : প্রতীকী

মাধুর্যপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে মুহূর্তেই অন্য কারো মন জয় করা যায়। আবার এ ভাষার ভিন্নতায়—কর্কশ শব্দ দিয়ে অন্যের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করা যায়। অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার, কুরূচিপূর্ণ ও অহেতুক বাচালতা যেকোনো সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং আদর্শ ও নীতিবানদের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়।

মুমিনরা অযথা ও অহেতুক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকেন। এটা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী, যারা অসার কার্যকলাপ বা অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১-৩)

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ব্যক্তির জীবনে ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তার অহেতুক কথা ও কাজ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে। ’

ব্যক্তিত্বের স্তর বোঝা যায় আচরণ-উচ্চারণে। মান-মর্যাদাও চিহ্নিত হয় ব্যবহার-শিল্পে। অহেতুক কথা কখনো বিপদ টেনে আনে। তাই ইসলামে বাকসংযমের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা সংরক্ষণের জন্য তার কাছেই (অদৃশ্য) তত্পর প্রহরী রয়েছে। ’ (সুরা ক্বাফ, আয়াত : ১৮)

কথা বলা মানুষের জীবনের অপরিহার্য অনুসঙ্গ। মুখ তালাবদ্ধ করে রাখতে বলেনি ইসলাম। বরং নম্রভাবে, বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে আদেশ দিয়েছে। নিজেকে প্রভু দাবীদার ফেরাউনের কাছে মুসা ও হারুন (আ.)-কে যখন পাঠানো হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের আদেশ দিয়েছিলেন, ‘তোমরা তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলবে। (এতে) হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। ’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ৪৪)

লোকমান (আ.) তার পুত্রের প্রতি অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। তার কিছু উপদেশ আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। এক স্থানে তিনি বলেন, ‘সংযতভাবে তুমি তোমার পা পরিচালনা করবে আর তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখবে। নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গাধার কণ্ঠস্বরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৯)

কাজেকর্মে হয়তো বাকবিতণ্ডার মুখোমুখি হতে হয়। ফলে যুক্তিতর্ক ও বিবাদ কখনো জীবনের গতি ব্যাহত করে। তাই বলে শালীনতার সীমা অতিক্রম করা যাবে না কখনোই। বরং বাকসংযমের পাশাপাশি মার্জিতভাব রক্ষা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা উত্তম পন্থায় আহলে কিতাবের সঙ্গে যুক্তিতর্ক করবে। ’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৬)

কাউকে কটাক্ষ করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করা এবং মন্দ বিশেষণে ভূষিত করা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা অতিনিন্দনীয়। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

চিন্তা-আদর্শ, মননশীলতা, চলন-বলন ও সর্বোপরি জীবনের সামগ্রিক অঙ্গনে একজন সত্যিকার মুমিন বান্দার মৌলিকত্ব বিম্বিত হয়। তাই জীবনাচারে মার্জিতভাব, বাক্য ব্যবহারে পরিমিতিবোধ প্রতিটি মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। সাহাবি মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) একবার রাসুলের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আমরা কি নিজেদের কথার জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হব?’ রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন, ‘ওহে ইবনুল জাবাল! তোমার কথায় অবাক হতে হয়, জিহ্বার কারণেই তো (বহু) মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৬১৬)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার জিহ্বা ও লজ্জা স্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারবে, আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিতে পারব। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৪০৩৮)

জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আল্লাহ তাআলা আমাদের সর্বোত্তম আদর্শিক ছাপ রাখার তাওফিক দান করুন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
এমএমইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।