ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

দেশে দেশে মসজিদ

কানাডার প্রথম মসজিদের ইতিহাস

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
কানাডার প্রথম মসজিদের ইতিহাস কানাডার প্রথম মসজিদ ‘আল-রশিদ মসজিদ’।

কানাডা পৃথিবীর বহু সাম্প্রদায়িকতার শান্তিপূর্ণ উন্নত দেশ। সেখানে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ও বৈরিতা নেই। নেই ধর্মভিত্তিক সংঘাত। ভিন্ন ধর্মকে বিরূপ দৃষ্টিতেও দেখা হয় না। নিজ ধর্ম পালনে কানাডায় রয়েছে সাংবিধানিক অধিকার।

কানাডার প্রথম মসজিদ ‘আল-রশিদ মসজিদ’। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে অল্প-কিছু সংখ্যক মুসলিম নিজস্ব উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মসজিদটির ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন কানাডায় মুসলিমের সংখ্যা মাত্র ৬৪৫ জন। এডমন্টন শহরটিই তখন সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে সময়ে মুসলিমরা নিজেদের আকিদা-বিশ্বাস, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সভ্যতা-সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এবং নিজেদের সন্তানদের সে অনুযায়ী গড়ে তুলতে মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন অনুভব করেন। অন্যদিকে তখন আবার নামাজ পড়ার জন্য আলাদা নামাজঘরেরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে কারণে কানাডার মুসলমানরা তখন মসজিদ-ব্যবস্থার কাজ শুরু করেছিলেন।

কানাডার প্রথম মসজিদ ‘আল-রশিদ মসজিদ’র সম্মুখভাগের দৃশ্য।

পরামর্শ ও পরিকল্পনার পর ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি জমি ক্রয় করা হয়। তৎকালীন সময়ে যার মূল্য ছিল ৫ হাজার ডলার। মুসলিমদের বিশ্বাস ছিল এটিই হবে কানাডার ইতিহাসে প্রথম মসজিদ। সময়মতো নির্মাণকাজ শুরু হলেও পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার আগেই সে বছরের নভেম্বরে মসজিদটি চালু করে দেওয়া হয়। আর সেটিই ছিল কানাডার মাটিতে প্রথমবারের মতো কোনো বড় ধরনের ইসলামী সম্মিলন। কারণ মসজিদটির সর্বপ্রথম কার্যক্রম শুরু হয়, এক ব্যক্তির জানাযার নামাজের মাধ্যমে। আলী তারাবিন নামের সে ব্যক্তি উনিশ শতকের শুরুর দিকে কানাডায় পাড়ি জমান। তিনি স্থানীয় মুসলিমদের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। এনিউজলাইফ.সিএ’তে প্রকাশিত খবরের বরাতে এমনটাই জানা গেছে।

বরফে আচ্ছাদিত কানাডার প্রথম মসজিদের আঙ্গিনা।

আরো জানা গেছে, হালওয়া হামদুন নামের লেবানিজ এক মুসলিম তরুণী ১৯২০ সালে কানাডায় বসবাস শুরু করেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। মসজিদের জন্য জমি কেনার পেছনে তিনিই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩১ সালে ‘আরব-কানাডিয়ান ওমেন এসোসিয়েশন’র কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে তিনি তৎকালীন এডমন্টের নগরপিতা জন ফ্রাইয়ের কাছে মসজিদ নির্মাণের আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এরপর জমি কেনার লক্ষ্যে নিজে ও তার বান্ধবীরা মিলে অর্থসংগ্রহ শুরু করেন।

পরবর্তীকালে সার্বিক সিদ্ধান্তের পর ইউক্রেনীয়-কানাডীয় ঠিকাদার মাইক ড্রু মসজিদটি ইউক্রেনীয় ক্যাথলিক ও অর্থডক্স গীর্জাগুলির স্থাপত্যশৈলী অবলম্বনে নির্মাণ করেন। তবে দুইটি মিনার স্থাপন করে মসজিদের রূপে মুসলিম-আবহ তুলে ধরা হয়েছিল।

মসজিদের ভেতরের দৃশ্য।

বর্তমানে কানাডায় মসজিদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার এক শ। এ সংখ্যা বেড়েই চলছে। ৭০ শতাংশের বেশি মুসলমান নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন। অনেকগুলো মসজিদে জুমায় একাধিকবার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দৈনন্দিন মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়ও লক্ষণীয়। প্রায় সব মসজিদে এক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে অনায়াসে নামাজ আদায় করতে পারেন।

রাজধানী টরন্টোর সর্ববৃহৎ ইসলামী ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্সের অধীনে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি একত্রে জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন—এমন সুবিশাল একটি মসজিদ রয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে পার্কিং লট, ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলার মাঠ এবং ইসলামী স্কুলও রয়েছে। প্রায় ৫০ বিঘার ওপর পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।

মসজিদের ভেতরের দৃশ্য।

বর্তমানে কানাডার প্রায় প্রতিটি শহরে বিভিন্ন কমিউনিটিকেন্দ্রিক ইসলামিক সেন্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শুধু টরন্টো নগরীতে এ ধরনের প্রায় ১৬টি প্রতিষ্ঠান ও বড় কয়েকটি মাদরাসাও রয়েছে।

কানাডায় মুসলমানদের আগমন শতাধিক বছর আগে। ১৮৭১ সালের কানাডিয়ান আদমশুমারিতে প্রথম মুসলমানদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই শুমারিতে সংখ্যায় মাত্র ১৩ জন মুসলমানের উল্লেখ পাওয়া যায়।

সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, মুসলমানের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে ২০১০ সালের আগে। মোট জনসংখ্যার ৬.৬ শতাংশ মুসলমান। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ কানাডায় মুসলমান জনসংখ্যা তিন মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।