বান্দা যদি তার প্রতিপালককে যথাযোগ্যভাবে ডাকার মতো ডাকে আদবের সাথে কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর নিকট চায়, তাহলে তিনি তাতে সাড়া দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।
আমাদের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার নিকটই দোয়া করতে হবে। তার কাছে চাইতে হবে। তিনিই সবাইকে সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিমুক্ত করতে পারেন। দোয়া আমাদের জন্য সবসময় উপাদেয় ও উপকারী।
দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদতও বটে। দোয়ার মাধ্যমে ইবাদতে নিমগ্ন হলে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। প্রশস্ত হয়। মনের ভার কমে যায়। পেরেশানি দূর হয়। জীবনের সব কাজ আল্লাহর নামে এবং দোয়ার মাধ্যমে শুরু করলে তা অত্যন্ত সফলতা ও স্বার্থকতা লাভ করে। তাই আমাদের উচিত সর্বদা দোয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু ও শেষ করা।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদতের মগজ। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৯৩)
তিনি আরো বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৩৭০)
ইবাদত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। দোয়া যে ইবাদত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দোয়া সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট বান্দার দোয়া অপেক্ষা অধিক মূল্যবান জিনিস আর কিছু নেই। ’ তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৯২)
অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘যার জন্য দোয়ার দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে (অর্থাৎ যাকে দোয়া করার তাওফিক দান করা হয়েছে) তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫৪৮)
আল্লাহর দরবারে একাগ্রচিত্তে কাকুতি-মিনতিসহ দোয়া করলে কবুল হয়। কায়মনোবাক্যে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া না করলে তা কবুল হয় না।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘উদাসীন ও অমনোযোগী ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৪৭৯)
কাজেই দোয়া করার সময় এদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু শর্ত ও আদব
* হারাম পানাহার থেকে বেঁচে থাকা।
* পোশাক ও উপার্জন হালাল হওয়া।
* দোয়ায় আন্তরিক হওয়া, উদাসীন না হওয়া।
* আল্লাহর করুণার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখা, নিরাশ না হওয়া। তাড়াহুড়া না করা।
* মিথ্যা, গীবত, হিংসা-বিদ্বেষের অভ্যাস দূর করা।
* পর্দাপালন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করা।
* মাতা-পিতার অবাধ্য না হওয়া।
দোয়া কবুলের সহায়ক ভূমিকা পালন করে এমন কিছু বিষয়
* বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করা।
* দোয়ার শুরু ও শেষে দুরুদ শরীফ পড়া।
* হামদ ও সানা দ্বারা আরম্ভ করা।
* দোয়ার আগে কোনো নেক কাজ করা। নেক কাজের কথা স্মরণ করা।
* পাক-পবিত্র হয়ে দোয়া করা।
* মুমিন ব্যক্তি খাঁটি দিলে দোয়া করলে তা সবসময়ই কবুল হয়। একনিষ্ঠভাবে কায়মনোবাক্যে দোয়া করলে, তা কবুল হওয়ার আশা করা যায়।
তবে কিছু লোক এমন আছেন যাদের দোয়া আল্লাহ তাআলা বিশেষ করে কবুল করেন।
তাদের মধ্যে পীড়িত, বিপদগ্রস্ত ও নির্যাতিতের দোয়া অন্যতম। সন্তানের জন্য মা-বাবার এবং যে সন্তান মা-বাবার তাবেদারি ও খেদমত করে। অনুপস্থিত ব্যক্তির দু'আ। নেক ব্যক্তি, মুসাফির ও রোজাদারদের দোয়া।
অবশ্যই মনে রাখা চাই যে, কোনো দোয়াই বিফল হয় না । খালিসভাবে দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হয়। তবে এর সুরত তিনটি : এক. বান্দা যখন কোনো কিছুর দোয়া করে, তা কল্যাণকর হলে আল্লাহ তাকে দুনিয়ার জীবনেই দান করেন। দুই. কোনো সময় ওই দোয়ার দ্বারা অন্য কোনো বালা-মুসিবত দূর করেন। তিন. আবার কখনো এর বদলা আখেরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন।
সর্বোত্তম দোয়া হলো যা কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদেরকে দুযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০১)
আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) অধিকাংশ সময় এ দোয়া পড়তেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আনন্দিত যে, আল্লাহ দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা ও দূরাবস্হার সময় তার দোয়া কবুল করেন, তার উচিত স্বাভাবিক অবস্থায় অধিকহারে দোয়া করা। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৩০৪)
দোয়া সকল বেদনার উপশম। যে দোয়া করতে জানে, সে কোনো কিছুতেই আটকে থাকে না। আল্লাহ তাআলাই উত্তম সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর নিকট তাওফিক চাই। যেনো দোয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ইহতিমাম করতে পারি।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এমএমইউ