ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শব্দ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাফিক পুলিশ-রিকশাচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
শব্দ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাফিক পুলিশ-রিকশাচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় শব্দ দূষণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা সমস্যায় ভুগছেন এমন ট্রাফিক পুলিশ ও নিবন্ধিত রিকশাচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ  দেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লার পুলিশ কমিশনার, মেয়রদের আগামী চার মাসের মধ্যে হলফনামা করে এ তালিকা দিতে বলা হয়েছে।  

রুলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি ৭ ও ৮ অনুসারে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং শব্দ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাফিক পুলিশ ও রিকশাচালকদের ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মেয়র, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আওলাদ হোসেন।

‘রাজপথে শব্দদূষণ/ কানের সমস্যায় বেশি ভুগছে রিকশাচালক ও ট্রাফিক পুলিশ’ শিরোনামে গত বছর ৯ নভেম্বর কালের কণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)’র পক্ষে গত সপ্তাহে জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করা হয়।

আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্ট সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চেয়েছেন। তালিকা আসলে ক্ষতিগ্রস্ত কতজনকে কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাইবো, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

সিটি করপোরেশন এলাকার শব্দদূষণ নিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পেশাজীবীদের মধ্যে কানের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন রিকশাচালকরা। তাদের মধ্যে ৪১.৯ শতাংশের এ সমস্যা রয়েছে। এর পরেই রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দেশের প্রায় ৩০.৭ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন মাত্রায় কানের সমস্যা রয়েছে। পাঁচ সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কানের সমস্যায় ভুগছে কুমিল্লার মানুষ।

প্রতিষ্ঠানটির অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইকা নিজামের গবেষণা প্রতিবেদন ছিল এটি। গত বছর ৮ নভেম্বর ‘বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় পাঁচটি সিটি করপোরেশনে (ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট) শব্দদূষণের মাত্রা পরিমাপ করার কথা বলা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব এলাকায় রাজপথে কর্মরত ৬৪৭ জন পেশাজীবীর (ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট, বাসচালক ও হেলপার, পিকআপচালক, সিএনজিচালক, লেগুনাচালক, দোকানদার, মোটরবাইকচালক, রিকশাচালক এবং সেডান/এসইউভি চালক) শ্রবণশক্তি পরিমাপ করা হয়েছে। লেগুনার চালকদের ২৩.৯ শতাংশ কানে শোনার সমস্যায় ভুগছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন বিবেচনায় কানে শোনার সমস্যা সবচেয়ে বেশি কুমিল্লার মানুষের। এ এলাকার রাজপথে চলাচলকারীর প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষের কানে সমস্যা রয়েছে। সিলেটে ৩০.৭ শতাংশ, ঢাকায় ২২.৩ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১৩.৯ শতাংশ।

সিটি করপোরেশনগুলোর রাজপথে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবল, যা অনুমোদিত মাত্রা ৬০ ডেসিবলের চেয়ে বেশি। গবেষণা জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি চারজনে একজন বা প্রায় ২৫.৪ শতাংশ মানুষের কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছে। এদের ৭ শতাংশেরই এ মুহূর্তে হিয়ারিং এইড ব্যবহার জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
ইএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।