ঢাকা: হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
এর কয়েক দিনের মধ্যে এবার ৪৭ জন ব্যক্তি আপিল বিভাগে বিচারাধীন জামায়াতের নিবন্ধনের মামলায় (লিভ টু আপিল) পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন।
আবেদনকারীদের একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে এ আবেদন করা হয়েছে। এখানে মোট ৪৭ জন আবেদন করেছেন, যাদের মধ্যে ৮ জন জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য, তিন জন মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষকসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রয়েছেন।
এর আগে গত ২৭ জুলাই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, শিক্ষাবিদসহ ৪২ বিশিষ্টজন জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে আবেদনের করেছেন বলে জানিয়েছিলেন ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর।
জামায়তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটকারী মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ তিনজন হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ১০ বছর পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে জুন মাসে পৃথক আবেদন করে।
এমন আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
২৬ জুন আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেছিলেন, আমরা দুটি আবেদন করেছি। একটা হচ্ছে হাইকোর্টের রায় বলবৎ থাকার পরও ১০ বছর পরে জামায়াত কর্মসূচি পালন করেছে। আরেকটা আদালত অবমাননার। কারণ তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন যেখানে আদালত অবমাননার বিষয় আছে। অথচ হাইকোর্টের রায়ে তাদের নিবন্ধন অবৈধ। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।
পরে জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। দীর্ঘদিন পর ওই আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেন রিটকারী পক্ষ। সে অনুসারে আপিলটি চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় ওঠে।
৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ