ঢাকা: প্রায় এক যুগ আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণহত্যার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনা ও ‘গণজাগরণ মঞ্চ’র মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (১২ মার্চ) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আসামিদের মধ্যে পলাতক শেখ হাসিনা, ইমরান এইচ সরকার ছাড়াও রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, শহীদুল হক ও বেনজীর আহমেদ, বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলাম।
এর মধ্যে টুকু, শহীদুল, জিয়াউল ও নজরুল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাদের আগামী ১২ মে এই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রত্যাখ্যান করে ফাাঁসির দাবিতে ডা. ইমরান এইচ সরকার, অমি রহমান পিয়াল, আরিফ জেবতিক, বাপ্পাদিত্য বসু, লাকি আক্তারসহ একদল ব্লগার-অ্যাক্টিভিস্টের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। পরে সংগঠকরা এর নাম দেন ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। এই মঞ্চের অগ্রভাগে আওয়ামী-বাম ঘরানার লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক-পেশাজীবীদের দেখা যায়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হওয়া পর্যন্ত এই মঞ্চ বেশ সক্রিয় ছিল।
পরে এই মঞ্চের সঙ্গে জড়িতদের অনেকে ইসলামবিদ্বেষী ব্লগিং করছেন অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন ধর্মপ্রাণ লোকজন। এই আন্দোলনকে ঘিরে আত্মপ্রকাশ ঘটে নতুন সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র।
ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রতিবাদ জানাতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ ডাকে। পরে তারা সেখানে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। রাতে তাদের সেখান থেকে সরাতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ নিরাপত্তা বাহিনী।
ওই রাতে নৃশংস অভিযানে বহু লোককে হত্যার অভিযোগ করে হেফাজত। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ভাষ্যমতে, ৬১ জন লোক সেদিন মারা যায়। যদিও সেই প্রতিবেদনের কারণে অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে শাপলা চত্বরে চালানো ক্র্যাকডাউনসহ বিগত সরকারের শাসনামলের বিচারবর্হিভূত সব হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৫
ইএসএস/এইচএ/