ঢাকা: চট্টগ্রাম বন্দরে তরল কোকেন আটকের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় খানজাহান আলী গ্রুপের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে চেম্বার বিচারপতির আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। চার সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তিরও আদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে করা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার (১৮ জুলাই) এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
নূর মোহাম্মদের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
নগর পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তরল কোকেন সন্দেহে গত বছরের ০৬ জুন রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার সিলগালা করেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ০৮ জুন এটি খুলে ১০৭টি ড্রামের প্রতিটিতে ১৮৫ কেজি করে সানফ্লাওয়ার তেল পাওয়া যায়। তেলের নমুনার প্রাথমিক পরীক্ষা করে কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে উন্নত ল্যাবে কেমিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ২৭ জুন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর জানায়, কেমিক্যাল পরীক্ষায় একটি ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
গত বছরের ২৮ জুন নগরীর বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গনি বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ এর ১ (খ) ধারায় খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে চোরাচালানের ধারায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেটি তদন্তাধীন আছে।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর কোকেন আমদানির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত দু’জনসহ মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়। তবে এজাহারে নাম থাকলেও কোকেনের চালানটি যে প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দরে আনা হয়েছিল খানজাহান আলী লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক নূর মোহাম্মদকে অভিযোপত্রে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
০৭ ডিসেম্বর অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হয়। এজাহারভুক্ত প্রধান আসামির নাম না থাকায় অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেননি আদালত। ওইদিন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রহমত আলী চাঞ্চল্যকর কোকেন আমদানি মামলার অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কমকর্তাকে দিয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাবকে দায়িত্ব দেন। ৯ ডিসেম্বর আদালতের আদেশের কপি র্যাবের কাছে পৌঁছে।
অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয় তারা হলেন- লন্ডনে অবস্থানরত বকুল মিয়া ও ফজলু মিয়া, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেল, কসকো শিপিং লাইনের ম্যানেজার এ কে আজাদ, গার্মেন্ট পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদি আলম, সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এবং আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম গত বছরের ১৮ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বাকি আসামিরা কারাগারে আছেন।
র্যাব-৭ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে।
বিচারিক আদালত নূর মোহাম্মদের জামিন নাকচ করলে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান। গত ১৬ জুন বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ জামিন দেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এরপর জামিনের আদেশ স্থগিতের আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ২০ জুন নূর মোহাম্মদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত।
রোববার (১৭ জুলাই) নিয়মিত বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
ইএস/এএসআর