ঢাকা: ভারতের সাহারা গ্রুপের মতো গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ডেসটিনি গ্রপের কাছে প্রস্তাব চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
১১ আগস্টের মধ্যে ডেসটিনি গ্রুপের আইনজীবীর মাধ্যমে এ টাকা ফেরতের বিষয়ে প্রস্তাব দিতে হবে।
অর্থপাচার ও আত্মসাতের দুই মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের জামিন শুনানিতে এ প্রস্তাব চান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির বেঞ্চ। পাশাপাশি ১১ আগস্ট পর্যন্ত হাইকোর্টের জামিনের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ডেসটিনির দুই কর্মকর্তার পক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় এ দুই মামলা দায়ের করে দুদক।
এ দুই মামলায় আসামিরা ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে তারা কারাবন্দি রয়েছেন।
গত ২০ জুলাই বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ শর্ত সাপেক্ষে এ দু’জনের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
এরপর জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন জানায় দুদক। গত ২৪ জুলাই এ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে ৩১ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত।
রোববার এ আবেদনের শুনানিতে আপিল বিভাগ ডেসটিনির আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আপনি সুব্রত রায়কে চেনেন? আইনজীবী কোনো জবাব না দেওয়ার পর আদালত বলেন, সুব্রত রায় হলেন ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক। তাদের অনেক কিছু (ব্যবসা) আছে। এমনকি সাহারা গ্রুপ আমাদের ক্রিকেট দলের স্পন্সরও ছিলেন। তাদের মালিক জেলে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশ মতো টাকা ফেরত দিচ্ছেন। তাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। এমনকি তার মায়ের অসুস্থতাও আমলে নেওয়া হয়নি’।
আদালত ডেসটিনির আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘আপনি কিভাবে টাকা দেবেন বলেন?’
জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘টাকাতো ওনারা (দুদক) ফ্রিজ করে রেখেছে ২০১২ সাল থেকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হলসহ যা কিছু আছে’।
এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনি প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তারপর দেখবো। ১১ আগস্ট আবার কার্যতালিকায় থাকবে’।
পরে দুদকের আইনজীবী বলেন, আদালত তাদের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব চেয়েছেন। আপাতত অন্তত এক হাজার কোটি টাকার বিষয়ে।
সাহারার বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১২ সালের আগস্টে সাহারা রিয়েল এস্টেট ও সাহারা হাউজিং সংস্থাকে সুদসহ প্রায় ২৪ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
কিন্তু আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে না মানায় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (সেবি) আদালতে আবেদনের পর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
পরে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লখনৌ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর গ্রেফতার হন সুব্রত রায়। পরবর্তীতে নগদ ৫ হাজার কোটি রুপি জমা দিতে পারলে ও ৫ হাজার কোটি রুপির ব্যাংক গ্যারান্টি পেলে জামিন দেওয়া হবে বলে আদালত শর্ত দেন।
সে অনুসারে জেলে থেকে বসেই সম্পত্তি বিক্রি করে নগদ ৫ হাজার ১২০ কোটি রুপি ফেরত দিতে পেরেছেন সুব্রত রায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
ইএস/এএসআর