ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

পাইলট সাব্বিরসহ ছয়জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
পাইলট সাব্বিরসহ ছয়জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে

ঢাকা: বিমান নিয়ে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’র অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার পাইলট সাব্বির এনাম সাব্বিরের সাতদিন এবং অন্য পাঁচ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

অন্য আসামিদের মধ্যে সাব্বিরের মা সুলতানা পারভিনের পাঁচদিন এবং পারভিনের আত্মীয় আসিফুর রহমান আসিফ ও মো. আলম, সাব্বিরের সহযোগী সাহাদাত হোসেন ওরফে আমির হামজা ও সম্রাট মিয়া ওরফে হুজুরে খোঁজের ছয়দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

বুধবার (০১ নভেম্বর) তাদেরকে দারুসসালাম থানার মামলায় (মামলা নং-৮) গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৠাব- ৪ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিরুল ইসলাম।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আহসান হাবিবের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা মিরপুরের দারুসসালাম জঙ্গি আস্তানায় নিহত জঙ্গি আব্দুল্লাহ’র সহযোগী ও জেএমবি’র সদস্য।

বিমানে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সোমবার (৩০ অক্টোবর) দিবাগত রাত দুইটা থেকে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টা পর্যন্ত দারুসসালামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাইলট সাব্বিরসহ প্রথম চারজনকে গ্রেফতার করেন র‌্যাব-৪ এর সদস্যরা। অন্য দুই আসামি টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার ১(৯)২০১৭ নম্বর মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন।

রিমান্ডের আবেদনের শুনানিতে সম্রাট ছাড়া অন্য কোনো আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তবে সাব্বির ও তার মা অভিযোগ অস্বীকার করে আদালতকে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুকদার ও আমিন উদ্দিন মানিক এবং সহকারী পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন রিমান্ডের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।

পাইলট সাব্বির ও তার মা সুলতানা পারভিনসহ পাঁচজনের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য আছে কি-না- জানতে চান আদালত।

সাব্বিরের মা সুলতানা পারভিন এ সময় বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আমার বাসায় ১২ বছর ধরে ছাড়া ছিলেন। ভাড়াটিয়া ছাড়া তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সত্য নয়। আমার ছেলে সাব্বিরের সঙ্গেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই। গত ৫ বছর ধরে আমার ছেলে আমার বাড়িতে আসে না। আমি তাদের কোনো বিষয়ে জানি না। আমাকে জোর করে অনেক কিছু বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি কখনো কোনো চাঁদা দেইনি’।

এরপর পাইলট সাব্বির বলেন, ‘গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) পর্যন্ত আমি ফ্লাই করেছি। ফ্লাই করতে হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্র লাগে। কোথাও থেকে আমার বিরুদ্ধে কোনো খারাপ প্রতিবেদন নেই। ২০১৫ সাল থেকে আমার মা সুলতানা পারভিনের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয় না। মা মাঝে মধ্যে আমার বাসায় এলেও আমি ২০১৫ সাল থেকে বাড়িতে যাইনি’।

‘আমার মামাতো ভাই আসিফকেও ধরে আনা হয়েছে। মিল্লাতকে চিনিও না এবং কোনোদিন দেখিও নাই। ২০১১ সাল থেকে আমি ফ্লাই করি। কেউ একজন আমার নাম বললো আর আমি দোষী হয়ে গেলাম? আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই সত্য নয়’।

রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, ‘গত ৩০ অক্টোবর এ মামলার আসামি বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, আব্দুল্লাহ ভাই যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার মালিক আজাদ ও তার স্ত্রী সুলতানা পারভিন আব্দুল্লাহ’র বাসায় মাঝে মাঝে আসতেন এবং ছাদে উঠে চেয়ারে বসে কথা বলতেন। আব্দুল্লাহও তাদের বাসায় মাঝে মাঝে যেতেন। আজাদ তার স্ত্রী সুলতানা পারভীন কামালের মাধ্যমে একবার সংগঠনের জন্য ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন। একবার আব্দুল্লাহ আমাকে বলেছিলেন, আজাদের স্ত্রী সুলতানা পারভিন সংগঠনের জন্য প্রতিমাসে টাকা দেন। আজাদের মেয়ে স্নিগ্ধাও আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা করতেন এবং তার সব বিষয়ে জানতেন। আজাদের স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে আসিফ প্রায় সময়ই আব্দুল্লাহ’র কাছে যেতেন এবং কথাবার্তা বলতেন। আসিফ ওই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। আজাদের স্ত্রী অস্ত্র কিনতে আব্দুল্লাহকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন। আসিফ একবার একটি নাইন এমএম পিস্তল বন্ধুর কাছ থেকে এনে বিক্রির জন্য দেখিয়েছিলেন। যার মূল্য ছিল ৭০ হাজার টাকা। আব্দুল্লার সঙ্গে আসিফের গভীর সম্পর্ক ছিল’।

‘আজাদের একমাত্র ছেলে সাব্বির বিমানের পাইলট ছিলেন। গুলশান হামলার আগে বা পরে আব্দুল্লাহ, সাব্বির, ফরহাদসহ (সরোয়ার জাহানের সংগঠনের নাম) পরিকল্পনা করেন যে, সাব্বির বিমান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ফেলবেন বা বিমানযাত্রীসহ সিরিয়ার আইএস ঘাঁটিতে নিয়ে যাবেন। সাব্বির আরও জানান যে, কয়েক মাসের মধ্যেই চাকরির ভাতা বাবদ ১০ লাখ টাকার বেশি পাবেন। ওই টাকা সংগঠনের জন্য দিয়ে দেবেন। এ বিষয়গুলো আব্দুল্লাহ সকলকে জানান’।

‘অন্যদিকে আসামি সাহাদাত ও সম্রাট টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার ১(৯)২০১৭ নম্বর মামলার স্বীকারোক্তিতে আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা এবং ঢাকায় এসে আব্দুল্লাহসহ অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছেন’।

র‌্যাবের দাবি, সাব্বির ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রিজেন্ট এয়ারওয়েজে চাকরি করেন। ওই বছরই তিনি বিমানের পাইলটের চাকরি নেন। বিমানের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে সাব্বির বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ চালাতেন।

গত ৩০ অক্টোবর তিনি ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেন। তবে জঙ্গি আবদুল্লাহ’র সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। নিহত জঙ্গি সারোয়ার জাহানের কাছ থেকে সাব্বির বায়াত গ্রহণ করেন। গুলশানে হোলি আর্টিজানে হামলার আগে ও পরে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তার। এরই অংশ হিসেবে সাব্বির বিমান চালিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বাসভবনে আঘাতের পরিকল্পনা করেন।

গত ০৪ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুর মাজার রোডের বর্ধনবাড়ি এলাকায় পাইলট সাব্বির ও সুলতানা পারভিনের বাড়ি ‘কমল প্রভায়’ অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযান চলার সময় ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণ হয়। অভিযানে জঙ্গি মীর আকরামুল করিম ওরফে উপল ওরফে আবদুল্লাহ (৪৩) ও তার পরিবার আত্মসমর্পণের জন্য সময় নেন। কিন্তু পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী নাসনির (৩৫) ও ফাতেমা (২৫), দুই সন্তান ওসামা বিন আকরামুল (১০) ও ওমর বিন আকরামুল (৩) এবং দুই সহযোগী কামাল ও অজ্ঞাত ব্যক্তি আত্মাহুতি দেন। ওই ঘটনায় র‌্যাব বিপুল পরিমাণে বোমা, গান পাউডারসহ ২৪ ধরনের আলামত জব্দ করে। এরপর গত ০৮ সেপেম্বর বিস্ফোরক আইনে মামলাটি দায়ের করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৭
এমআই/পিএম/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।