ঢাকা: চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জের ‘বাংলা কলেজ’ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ভবনের দখল ও অবস্থানের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (০৬ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
পরে হাসান এম আজিম বলেন, আদালত রুল জারি করে ভবনটির দখল ও অবস্থানের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য কার্যতালিকায় থাকবে। রুলে প্রাচীন পুরাকীর্তির এ ঐতিহাসিক যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ভবন বর্তমানে শিশুবাগ স্কুল ভবন রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং ওই ভবন পুরাকীর্তির তালিকায় কেন অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
সংস্কৃতি সচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
দৈনিক আজাদীতে ৫ জানুয়ারি ‘শিশুবাগ স্কুলের ভবন ভাঙ্গা নিয়ে উত্তেজনা’ প্রকাশিত প্রতিবেদনযুক্ত করে এ রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আলম চৌধুরী এ রিট দায়ের করেন।
দৈনিক আজাদীর প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার শিশুবাগ স্কুলের ভবন ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল (৪ জানুয়ারি) দুপুরে ভবন ভাঙাকালীন দুই পক্ষকে মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন জনের হস্তক্ষেপে ভবন ভাঙা স্থগিত রাখা হয়। যদিও এর আগেই স্কুলের বেঞ্চ-টেবিলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বের করে ভবনের উপরের একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। দুপুরের পর থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোতোয়ালি থানার এসআই অমিতাভসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। জেলাপ্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জানতে চাইলে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে এম. ফরিদ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি তার দখল সত্ত্ব বুঝে নিতে সেখানে গেছেন বলে জানান কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। তবে ভবন ভাঙার কাজ শুরুর কিছুক্ষণ পর বিভিন্নজনের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত রাখতে নির্দেশনা আসে। নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ভবন ভাঙা কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি- স্কুলটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি। যা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের এই আইনজীবীর ছেলে হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। ব্যারিস্টার যতীন্দ্রমোহনও ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। তিনি কলকাতার মেয়রও হয়েছিলেন। ইংরেজ স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তাকে নিয়ে কিছু দিন ভবনটিতে ছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ বসু, মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে এসেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীরাও এই বাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা লড়েছিলেন যতীন্দ্রমোহন। এতে ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়ে ১৯৩৩ সালে কারাগারে মৃত্যু হয়েছিল যতীন্দ্রমোহনের। এরপর নেলী সেনগুপ্তা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জের বাড়িটিতে ছিলেন। ১৯ গণ্ডা এক কড়া পরিমাণ জমিটি পরে শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি জমিটি লিজ বা ইজারা নিয়ে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে। পরে নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইছহাকের সন্তানরা স্কুলটি পরিচালনা করছেন। প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলটিতে অধ্যয়ন করছে বলে জানিয়েছেন শিশুবাগ স্কুলের পরিচালক আবু নাসের টিপু। কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ২০ জন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই বাড়িটিকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি রক্ষার্থে জাদুঘর হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন>> ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত সেই ভবন রক্ষায় রিট
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২১
ইএস/এইচএডি