ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

রায়হান হত্যা

সাক্ষীর মৃত্যু, হুমকিতে শঙ্কিত রায়হানের পরিবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২১
সাক্ষীর মৃত্যু, হুমকিতে শঙ্কিত রায়হানের পরিবার

সিলেট: সিলেটে রায়হান উদ্দিন হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী সুলাই লাল আত্মহত্যার করেছেন বলে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। সেসঙ্গে মামলার আরেক সাক্ষীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ নিহত রায়হানের মা সালমা বেগমের।



রোববার (৫ ডিসেম্বর) আদালতে রায়হান হত্যা মামলার শুনানিকালে আদালতে হাজির হন সালমা বেগম। আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সামনে এমন অভিযোগ তুলেন।  

সালমা বেগম বলেন, ‘নগরের কাষ্টঘর এলাকার সুলাই লালের ঘর থেকে তার ছেলে রায়হানকে সুস্থ অবস্থায় তুলে আনে পুলিশ। ফাঁড়িতে এনে রাতভর রায়হানকে মারধর করা হয়।

এ ঘটনার প্রথম এবং মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন সুলাই লাল। তিনি দুই মাস আগে নাকি মারা গেছেন। এখন শুনতে পাচ্ছি, কেউ কেউ বলছেন, পুলিশও বলছে, সুলাইলাল নাকি আত্মহত্যা করেছেন। আমি সঠিক জানি না, তিনি কিভাবে মারা গেছেন’।

তার অভিযোগ, ‘মামলার আরেক সাক্ষী হাসান। যিনি ঘটনার রাতে ফাঁড়ির পার্শ্ববর্তী ভবন কুদরতউল্লাহ মার্কেটের দোতলা থেকে রাতভর আমার রায়হানের চিৎকার নিজের কানে শুনেছেন। পরদিন ঘটনাটি আমাদেরকে বলেছেন। তিনি এখন ঢাকায় আছেন। তবে, তাকেও এখন অজ্ঞাতপরিচয়রা সাক্ষী না দিতে হুমকি দিচ্ছেন। বলছে- ‘হাসান’ তুমি কোথায় আছো? তুমি সাক্ষী দিতে যাবে না বলে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘দুইজন সাক্ষীর একজন মারা গেলেন। আরেকজনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এখন নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত তিনি। আসামিরা কারাগার থেকে যেভাবে হুমকি দিচ্ছে, জেলে থেকেও তারা প্রভাব  খাটাচ্ছে। যদি জেল থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে আরো কতো রায়হান মারা যাবে! যে কারণে আর কোনো রায়হান এভাবে মারা যাক তা আমি চাই না।

রায়হানের মা সালমা বেগমের অভিযোগ, সুলাই লালের আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে এসএসপির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) একাধিকবার  ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর সকালে গুরুতর অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সোয়া ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী  পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নিবারণের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

ঘটনার পর হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া ভারতে পালিয়ে যান। গত বছরের ৯ নভেম্বর  সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করে দেখায় পুলিশ। পরদিন ১০ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ১৭ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরপর বছরের ১৩ অক্টোবর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তভার গ্রহণ করে। বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন ৫ পুলিশসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ১৯শ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযুক্তরা হলেন- সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও অভিযুক্ত কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান পলাতক রয়েছে।

৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক আবুল মোমেন রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।