ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আজাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন এই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।
তিনি বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি উনার ন্যাচারাল ডেথ (স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে) এবং উনি মারা গেছেন হাইপার টেনশনে।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) এই মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জেএমবির সূরা সদস্য আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।
সেই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, হত্যা মামলা হওয়ার পরও কোনো মেডিক্যাল সাক্ষীর জবানবন্দি এই মামলায় নেওয়া হয়নি। আমরা আদালতকে বারবার বলেছিলাম যেহেতু এটা ৩০২ ধারার মামলা ডাক্তারকে সাক্ষী হিসেবে আনা হোক। উনারা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু রাষ্ট্র আনতে ব্যর্থ হয়েছে। সব প্রটোকল ব্যবহার করেছে কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী আনতে পারেনি।
হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে এই আইনজীবী বলেন, ময়নাতদন্তের ফটোকপি যেটা পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে স্যারের পাকস্থলীতে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। যেটাকে আমরা ভোদকা বলি। যেহেতু জার্মানি ঠাণ্ডার দেশ, তাই জীবন বাঁচাতে তিনি অ্যালকোহল নিয়ে থাকতে পারেন। আমরা আদালতকে বলেছি উনার ন্যাচারাল ডেথ (স্বাভাবিক মৃত্যু) হয়েছে এবং উনি মারা গেছেন হাইপার টেনশনে ।
এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় আনীত খুনের অভিযোগ যথাযথ নয় বলে মনে করেন আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।
তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে আঘাতের কারণে মারা গেছেন এ কথা বলেনি। ছয় মাস পরে তিনি মারা গেছেন, তাই ৩০২ এর মামলা হবে না। চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে ঠাণ্ডার কারণে মারা গেছেন। কিন্তু বিচারক ভালোমতো বিষয়গুলো পর্যালোচনা না করেই আসামিদের সাজা দিয়েছেন। মামলা হলেই ফাঁসি দিতে হবে এ ধরনের ট্রেন্ড থাকলে আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করা সম্ভব না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেখা যায় নিম্ন আদালত থেকে ফাঁসি হয়, আর উচ্চ আদালতে গিয়ে খালাস পায়। অনেক সময় নিম্ন আদালতের বিচারকরাও তাদের রায়ের জন্য গিয়ে উচ্চ আদালতে ক্ষমা চান। যতটুকু দোষী এবং যতটুকু প্রমাণ হয় সে অনুযায়ী সাজা দেওয়া হোক। কিন্তু একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া কখনো কাম্য নয়।
হুমায়ুন আজাদের ব্যক্তিগত সাক্ষীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ৮ মার্চ হুমায়ুন আজাদ স্যার তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) কাছে সাক্ষী দিয়েছেন, আমাকে যিনি প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে বারি মারে তিনি আমার চেয়ে দেড় বছরের বড়। তখন স্যারের বয়স ছিল ৫৬, তাহলে যে আঘাতটা করেছে তার বয়সটা হবে ৫৭ বা ৫৮। আর আমাদের আসামির বয়স ২৬ থেকে ২৭, এটাও আদালত বিবেচনায় নেননি। আদালত আমাদের কোন যুক্তিকে গ্রহণ না করে সাজা দিয়েছেন। এই রায়ে আমরা মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
কেআই/এএটি