ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘মাসুদ রানা’ সিরিজ নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি ৩০ মে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
‘মাসুদ রানা’ সিরিজ নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি ৩০ মে

ঢাকা: সেবা প্রকাশনীর পাঠকপ্রিয় ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বই নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে কাজী আনোয়ার হোসেনের পরিবার।

রোববার (২৪ এপ্রিল) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য ৩০ মে দিন রেখেছেন।

আদালতে আনোয়ার হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এবিএম হামিদুল মেসবাহ।

শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইফতাবুল কামাল অয়ন।

পরে খুরশীদ আলম খান বলেন, প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে পক্ষভুক্ত হয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়েছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ স্থগিতাদেশ না দিয়ে লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য ৩০ মে দিন ধার্য করেছেন।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা নিয়ে শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে কপিরাইট অফিসের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। ফলে মালিকানা শেখ আবদুল হাকিমের রইলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

ওইদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেছিলেন, বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ শুনানি বা আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার কপিরাইট অফিসকে দেওয়া হয়নি। যেহেতু তিনি আদেশ দিয়েছেন সেহেতু আদেশটি এখতিয়ার বহির্ভূত। এ যুক্তিতে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত মালিকানা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। আর আবেদনকারী কপিরাইট আইনের অধীন জেলা বা দায়রা কোর্টে প্রতিকার চাইতে পারেন বলে অবজারভেশন দিয়েছেন। আমরা আদালতের কাছে চেয়েছিলাম কপিরাইট রেজিস্ট্রারের কাজ অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। আদালতের কাছে মনে হয়েছে সংবিধানের ১০২ এর অধীনে এখানে চাওয়ার বিষয় না। এটা মনে করে রুলটি খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। আমরা মনে করি এখানে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আমরা আপিল করব।

খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, এ রায়ের ফলে কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্তই বহাল রাখলো উচ্চ আদালত। তার মানে মালিকানার স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমেরই থাকলো।

খুরশীদ আলম খান আরও বলেছিলেন, আমরা বলেছি, শেখ আব্দুল হাকিম এ রিটের গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হওয়ার কথা। কিন্তু শেখ আবদুল হাকিমকে এ রিটে পক্ষই করেননি কাজী আনোয়ার হোসেন। এ মামলায় একজন অ্যামিকাস কিউরি রাখা হয়েছিল। তিনিও বলেছিলেন রিটে শেখ আবদুল হাকিমকে পক্ষ করা উচিত ছিল। কিন্তু তাকে এ রিটে পক্ষ করা হয়নি। পরে আদালত রিট ও রুল খারিজ করে রায় দিয়েছেন।      

২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আবদুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ কপিরাইট অফিসে দাখিল করেন।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই শেষে ২০২০ সালের ১৪ জুন কপিরাইট অফিস শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কাজী আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন।

২০২০ সালের ১৪ জুন এ বিষয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘শেখ আবদুল হাকিমের দাবি করা ২৬০টি মাসুদ রানার বইয়ের মধ্যে একটি ও কুয়াশার ৫০টি বইয়ের মধ্যে ছয়টিতে লেখক হিসেবে তার নাম কপিরাইট করা আছে। বাকিগুলোর কপিরাইট করা নেই। তবে সেগুলো তার লেখা এটি তিনি প্রমাণ করেছেন। কিন্তু কপিরাইট অন্তর্ভুক্তির কারণে তাকে প্রতিটি বইয়ের জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হবে। এরপর প্রতিটি বইয়ের লেখক হিসেবে তার নাম যাওয়ার পাশাপাশি, কপিরাইটও তার হয়ে যাবে। ’

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রায়ে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে কপিরাইট বোর্ড বা বিজ্ঞ আদালত থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত আবেদনকারীর দাবি করা ও তালিকাভুক্ত বইগুলোর প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হলো।

এছাড়া প্রতিপক্ষকে আবেদনকারীর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা প্রকাশিত বইগুলোর সংস্করণ ও বিক্রিত কপির সংখ্যা এবং বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী এ আদেশ জারির তারিখের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
ইএস/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।