ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মহাসড়কের জমি বন্ধক রেখে ঋণ: দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
মহাসড়কের জমি বন্ধক রেখে ঋণ: দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ

ঢাকা: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের মহাসড়কের সরকারি জমি বন্ধক রেখে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনা অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আগামী ২৬ জুনের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়ে ওই দিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক ও মো.তামজীদ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওবায়েদ আহমেদ এ রিট করেন।

রিট আবেদনে গত ১৬ এপ্রিল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘মহাসড়ক বন্ধক দেখিয়ে লুটপাট ১৫ কোটি টাকা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাসড়কের সরকারি জমি বন্ধক রেখে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন মো. গোলাম ফারুক নামে এক ভয়ঙ্কর প্রতারক। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি বাগিয়ে নেন মোটা অঙ্কের এ ঋণ। তবে সেটি ধরা পড়ার পর আবার সংশোধন করেন দলিল। এবার আগের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে ব্যাংকে জমা দেন। সংশোধিত দলিলের জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপনের চেষ্টা করলে ব্যাংক জানতে পারে সেটিও ভুয়া। সংশোধিত দলিলের জমির আসল মালিক জামির আলী। ২৭ শতাংশ ওই জমি দখলে নিতে একাধিকবার তার ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টা চলে। অবশেষে গত ১৪ এপ্রিল রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে ফারুকসহ তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফিরোজ আল মামুন ওরফে ফিরোজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

পরে ১৫ এপ্রিল দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।  

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাড্ডা থানার মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিল সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। যেখানে ভিকটিমকে নিজ জমি থেকে জোরপূর্বক উৎখাত করার উদ্দেশে প্রতারক গোলাম ফারুক ও তার প্রধান সহযোগী ফিরোজ আল মামুনসহ অন্যরা গত ২৬ মার্চ ও ৬ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশে হামলা করে। ওই ঘটনায় ভিকটিম আদালতে একটি নালিশি দরখাস্ত করে। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানাকে এফআইআর হিসেবে এটিকে গণ্য করার আদেশ দেয়। এ বিষয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়। র‌্যাব ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য দেয়। মহাসড়কের জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্যও দিয়েছে তারা।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী জামির আলী বলেন, আমার উত্তরার ২৭ শতাংশ জমি গ্রেফতারকৃত ফারুক দখল করার চেষ্টা করছিলেন। তাদের কাছে ওই জমির কোনো দাগ-খতিয়ান নেই।

এছাড়া ওই জায়গা বন্ধক দিয়ে একটি ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে ১৫ কোটি টাকা লোন নেন। যা আমার অনুপস্থিতিতে আমার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অভিযোগ করলে তারা ব্যবস্থা নেননি।  

জানা গেছে, ২০২১ সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রয়, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রি চেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। ওই ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে একটি প্রতারক চক্র মহাসড়ক শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমি কয়েকটি সরকারি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে সরকারি ভূমি ব্যক্তি মালিকানায় নিবন্ধন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নেয়। যদিও এসব জমি সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক অধিগ্রহণ করা।

১৯৪৮ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের অধিগ্রহণ হওয়ার আগের জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন। জালিয়াতির সাহায্যে তিনি ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন। পরে ওই দলিল মূলে তৎকালীন মালিকের ছেলের কাছ থেকে ফারুক তার স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করে আরেকটি দলিল তৈরি করেন। একই বছরে তার স্ত্রী থেকে ওই জমি নিজের নামে দলিল করে নেন। মহাসড়কের জমিকে নিজের বলে দেখিয়ে বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধক দেখান। ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে নিয়ে নেন ১৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশে বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রয় করার নোটিশ জারি করলে ব্যাংক সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায় যে, ওই জমিটি সরকারি সম্পত্তি। পরে তিনি ভুল সংশোধন দলিল করে আগের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে মামলার বাদীর ও ভুক্তভোগী জামির আলীর জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করেন। তখন ব্যাংক সেই জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গিয়ে জানা যায় সেটিও ভুয়া।  

রিটের পর আইনজীবী তামজীদ হাসান বলেন, মহাসড়কের জায়গা বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়েছেন। একটি বেসরকারি টিভিতে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি গোলাম ফারুক একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু মহাসড়কের জমি বন্ধকের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ওই ঘটনার তদন্ত চেয়ে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।

রিট আবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।     

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
ইএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।