ঢাকা: কোনো সরকারি কর্মচারীকে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার করতে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া সংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শুনানি মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে।
রোববার (২৩ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান জানান, আজকে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিলো। রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের একটি ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য সময় চেয়েছিলেন। আদালত নট টু ডে (শুনানি আজকে নয়) আদেশ দিয়েছেন। এখন এটার ওপর যে স্টে ছিলো সেটা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছিলেন। একইসঙ্গে শুনানি ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেন। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন।
সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করেন।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয়- পহেলা অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
আদালতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী সরোয়ার আহাদ চৌধুরী, একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও মাহবুবুল ইসলাম।
পরে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন ৪১(১) ধারায় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করা হয়।
তিনি বলেন, একই ধরনের সুযোগ দিয়ে ২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা প্রণয়নের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থে রিট করলে আদালত আইনটিকে বৈষম্যমূলক বলে বাতিল ঘোষণা করেন। একই সুযোগ সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে প্রণীত উক্ত আইনের ৪১(১) ধারা আদালতের রায়ের পরিপন্থী।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬(১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই রুলের শুনানি শেষে ২৫ আগস্ট সকালে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।
হাইকোর্টের রায়ের ফলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে অনুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবী।
রায়ের পর একইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সরকারি কর্মচারীদের অযথা হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দেন। আর তাকে যদি মামলার পর গ্রেফতার করা হয়, পরে তিনি যদি এ মামলায় খালাস পান তাহলে এটা একটা ভোগান্তি। এ ভোগান্তি নিরসন এবং সরকারি কাজের সুবিধার জন্য আইনটা করা হয়েছিলো। আদালত আজকে যে রায় দিয়েছেন তার অনুলিপি পেলে আমরা আপিল করবো।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
ইএস/এজে