ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

অনন্যারা আমাদেরই একজন

শারমীনা ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৫
অনন্যারা আমাদেরই একজন

যখন একটি সন্তানের জন্ম হয়, পরিবারের সবার সে কি আনন্দ! সেই সন্তান যখন ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে আর পরিবার বুঝতে পারে সন্তানটি অন্যদের মতো নয়, তার শারীরিক কিছু ত্রুটি(হিজড়া, তৃতীয় লিঙ্গ)রয়েছে তখন যেন তাকে কোথাও ছুঁড়ে ফেলতে পারলেই বেঁচে যায়।

আমাদের এমনই একজন বন্ধু অনন্যা।

না, তাকে পরিবার ফেলে দেয়নি। নয় ভাই বোনের সংসারে সে যখন বেড়ে উঠছিল, একটা সময় সে বুঝে যায়, সবার মতো নয় অনন্যা। তারপর একদিন নিজেই বের হয়ে আসে, তার ঠাঁই হয় অন্য হিজড়াদের সঙ্গে। কখনো অন্যের বাচ্চা কোলে নিয়ে নেচে বা দোকান থেকে টাকা তুলে জীবন চলে তাদের।

এরই মাঝে কেউ কেউ পড়ালেখা করে, কিন্তু ভাল চাকরি আর কয়জন পায়?

অনন্যার ভাইবোনদের সংসার হয়েছে। তারা ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার করছে। কারও সময় হয় না অনন্যার একটুখানী খোঁজ নেয়ার। কত উৎসব যায়, ঈদ, পহেলা বৈশাখ, পুজা অনন্যা মনে করতে পারেনা সে শেষ কবে পরিবারের কাছ থেকে কোনো উপহার পেয়েছে। শুধু কি তাই, এই ‍অনন্যাদের যখন কোনো সমস্যা হয় তখনও পাশে থাকে না পরিবার বা কোনো ‍আত্মীয়। অনন্যা কষ্ট নিয়ে বলেন, আবার যখন তাদের কারও মৃত্যু হয় তখন টাকা, গয়নার হিসেব নিতে পরিবারের লোক ঠিকই হাজির হয়।

আমরা ভুলে যাই অনন্যারা কোনো আলাদা গ্রহ থেকে ‍আসেনি। তারা আমাদের পরিবারেরই একজন। ‍অথচ আজও রাস্তায় নিরাপদ নয় তারা, অনেক সময়ই নানা ধরনের ‍ অশালীন মন্তব্য শুনতে হয়, সহ্য করতে হয় যৌন নির্যাতন।

এদের কাছে কেউ বাসা পর্যন্ত ভাড়া দিতে চায় না।   এজন্য ‍অবশ্য শুধু সমাজের লোকদের ওপরই দোষ দিতে নারাজ অনন্যা। তার মতে, হিজড়ারা খুব অল্প বয়সে পরিবার ছাড়া হয়। এরা ‍অনেক প্রতিকুল পরিবেশে বেড়ে ওঠে। তাই পরিবারিক বা সামাজিক তেমন কোনো শিক্ষাই প্রায় এদের থাকে না। এজন্য এক সময় অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা থাকলেও তাদের আর স্বাভাবিক পারিবারিক জীবনে ফেরা হয় না।

উৎসবের দিনগুলো যেন ভেতরে ভেতরে ডুকরে কেদে ওঠে অনন্যারা। বলছিল, ঈদের দিনের ছোটবেলার মায়ের হাতের রান্না করা খাবারগুলো ‍আজও মিস করে সে। কিন্তু খাবার তো অনেক দূরের কথা মায়ের সাথে একটু কথাও হয় না কখনো।

অনন্যা তবুও জানে তার পরিবারের কথা। তাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা নিজের বাবা-মায়ের পরিচয়ও জানে না।

এটা কেন হয়? একটি সংসারে দশজনের জায়গা হয়। আর তাদেরই একটি শিশুর ঠিকানা হয় রাস্তায়। ওদের জন্য কি কিছুই করার নেই আমাদের?

 ওরা তো আমাদেরই একজন। এদের দেখলে মুখ ফিরিয়ে না থেকে, আসুন ভালবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিন।  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।