ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যেভাবে জালিয়াতি মামলার আসামি হলেন নিরীহ কলেজছাত্র

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২২
যেভাবে জালিয়াতি মামলার আসামি হলেন নিরীহ কলেজছাত্র

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে জাল টাকাসহ আটক মামলায় পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার ভুলে জাহিদুল ইসলাম নামে এক কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের অভিযোগ উঠেছে।

নিজের সন্তানকে মামলার অপবাদ থেকে রক্ষা করতে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্র জাহিদুল ইসলাম জুয়েলের বাবা আফাজ উদ্দিন।

ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম জুয়েল লালমনিরহাট পৌরসভার খোচাবাড়ি ডাইলপট্টি এলাকার আফাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি আদিতমারী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র।

অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর আদিতমারী উপজেলা সাপ্টিবাড়ি বাজারের মুদি দোকানদার রফিকুল ইসলামের দোকানে পণ্য কিনতে গিয়ে জাল টাকাসহ এক যুবক আটক হন। এ সময় ওই যুবকের কাছ থেকে একটি এক হাজার ও ৬টি ৫শ টাকার জাল নোটসহ চার হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় পরদিন ১২ ডিসেম্বর জাল টাকা সরবরাহ আইনে আটক যুবকের নামে আদিতমারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুদি দোকানদার রফিকুল ইসলাম। এ সময় আটক যুবক নিজের ঠিকানা গোপন করে প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম জুয়েলের নাম ঠিকানা ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে আটক যুবক নিজেকে জুয়েল হোসেন (২২), পিতার নাম আফাজ উদ্দিন দাবি করেন।

মামলায় দুই মাস হাজতবাস করে আদালতের জামিনে মুক্তি নিয়ে গা ঢাকা দেন কৌশলী জাল টাকা সরবরাহ চক্রের ওই যুবক। এরই মধ্যে গত ২০২১ সালের ২৯ মার্চ জুয়েল হোসেনের নামেই আমলি আদালত-২ এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালিউর রহমান। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, অভিযুক্ত জুয়েল হোসেন ভাসমানভাবে বসবাস করায় স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই। অথচ মামলা নথিভুক্তের সময় তার ঠিকানা যাচাই করে সঠিকতা পেয়ে সদর থানা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পত্র দিয়েছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে আটক যুবক জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে থাকায় মামলার নিয়মানুযায়ী আদালতে গড়হাজিরা থাকায় জুয়েল হোসেন নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর পেয়ে চমকে ওঠেন জাহিদুল ইসলাম জুয়েলের পরিবার। পরবর্তীকালে থানা ও আদালতে যোগাযোগ করে মামলার নথি তুলে জুয়েলের বাবা জানতে পারেন তার ছেলের নামে আদিতমারী থানায় গত ২০২০ সালে জাল টাকার মামলা (জিআর ২৩৯) হয়েছে এবং দুই মাস হাজতবাসও করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন প্রতিবেশী যুবক শত্রুতাবশত নিজের দায় অন্যের ওপর চাপাতে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। পুলিশও সঠিকতা যাচাই না করেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

অবশেষে গত ২৫ অক্টোবর নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে ঘটনাটি পুনরায় তদন্ত করে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে দায়মুক্ত করতে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদন করেন জুয়েলের বাবা আফাজ উদ্দিন।

এরপর নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ। পুনরায় তদন্তে নামেন পরিদর্শক পদবির একজন কর্মকর্তা। প্রথম দিকে আটক যুবকের কারাগারে থাকা ছবি সংগ্রহ করে জাল জালিয়াতির বিষয়টি পরিষ্কার হয় পুলিশের কাছে। অবশেষে মামলাটিতে নাম ঠিকানা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করে জেলা পুলিশ।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্র জাহিদুল ইসলাম জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, মূল অপরাধী যে দুই মাস হাজতে ছিলেন সেই সময় আমি কলেজে নিয়মিত ক্লাস করেছি। তবে বিষয়টি সংবাদিকদের না জানাতে বলেছে পুলিশ। তারা সংশোধনের দায়িত্ব নিয়েছে। তাই এ নিয়ে আর কিছু বলতে চায় না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার বদলির কারণে আমি দায়িত্ব পাই। সেই সময়ে সদর থানার দেওয়া ক্লিয়ারেন্স মূলে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সংশোধনযোগ্য এবং সংশোধন করতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে এটা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন না করতেও অনুরোধ করেন তিনি।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জাল টাকাসহ আটক যুবকের কারাগারের নম্বর অনুযায়ী ছবি সংগ্রহ করেছি। এটা নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কথা বলেছি। বিষয়টি সংশোধন করা হবে। একই সঙ্গে মূল অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্তেরও চেষ্টা করছি। একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি যাতে অপরাধীর দায় নিয়ে হয়রানি না হয় সে ব্যাপারে আমরা সর্বদায় সজাগ রয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।