চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার টিআর, কাবিটা ও কাবিখা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ প্রকল্পের কাজ না করেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ কারার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রভাবশালী লোকজন ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে।
স্থানীয়রা এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জনিয়েছেন।
অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ দিন।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোইহলা চৌধুরীকে জানালে তিনি বলেন, আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা পিআইও অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সাধারণ ও বিশেষ কোটায় প্রথম কিস্তিতে কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পের ২৬ লাখ টাকার ৪৪ মেট্রিক টন চাল, ২৭.৯৪৪ মেট্রিক টন গম, নগদ অর্থের ১০টি চেক, টিনের চাল ৬টি এবং ৩টি কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের অনুকূলে ২৬ লাখ টাকা এবং টিআর প্রকল্পের অনুকূলে ৪ লাখ ৭ হাজার ৬৬৬ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ১৫ মার্চের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার সরকারি নির্দেশ ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রকল্পে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে কাগজ কলমে শতভাগ কাজ দেখিয়ে ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ অর্থ উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ২নম্বর আলগী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নম্বর ওয়ার্ডে মীর বাড়ি রাস্তা হতে সোনা গাজী বাড়ি হয়ে শাহ আলম মিয়াজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ না করে কাজ দেখিয়ে কাবিখা প্রকল্পে প্রথম কিস্তি বরাদ্দে দেওয়া ৮ টন চাল উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সোনা গাজী বলেন, আমাদের এই রাস্তায় গত দুই বছরেও কোনো কাজ হয়নি। আমার নামে রাস্তার কাজ আসছে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে। কিন্তু আমি দেখলাম না আজ পর্যন্ত কোনো কাজ করতে। কাজ না করে যারা টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে তাদের কে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।
উপজেলার ৩নম্বর দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের চরভাঙ্গা ৯নম্বর ওয়ার্ড সৈয়দ পাটোয়ারীর বাড়ি হতে ৭ নম্বর ওয়ার্ড সাহাদাত মাওলানার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ কাবিখা প্রকল্পের ৮টন চাল উত্তোলন করে রাস্তার কোনো কাজ করা হয়নি বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
ওই এলাকার আসানুল্লাহ রাড়ী বলেন, আমাদের এই রাস্তা বর্ষাকালে বেহাল দশা হয়ে থাকে। আমরা এলাকাবাসীরা নিজের টাকা দিয়ে এই রাস্তাটি কিছু সংস্করণ করেছি। রাস্তা সংস্কারে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা ভূমি অফিস এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত প্রেরণ করি। কিন্তু আজ অবধি সরকারের পক্ষ থেকে সংস্করণ করা হয়নি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই এই রাস্তাটি যেন দ্রুত নির্মাণ করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে বরাদ্দের সব টাকা যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের শাস্তি দাবি জানাই।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা বলে সকল বিল স্বাক্ষর করে নিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান। যেহেতু সেই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, আমি তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
এসএএইচ
