ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আজ রোকেয়া দিবস

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
আজ রোকেয়া দিবস ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: আজ ৯ ডিসেম্বর নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিন। এদিনটি বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়।

ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে নারীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাওয়া এ মহীয়সী নারীকে আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে জাতি। দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। রোকেয়ার জন্মভূমি রংপুরের পায়রাবন্দে তিন দিনব্যাপী রোকেয়া মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

১৯৩২ সালের এই দিনেই মারা যান তিনি। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বেশ ঘটা করেই প্রতি বছর এই দিনটিতে বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করা হলেও তার জন্মভূমিতে গড়ে ওঠা স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম আজও চালু হয়নি। সেই সঙ্গে বেগম রোকেয়ার পরিবারের বেহাত হয়ে যাওয়া প্রায় সাড়ে ৩০০ বিঘা জমি উদ্ধারসহ রোকেয়ার দেহাবশেষ ফিরিয়ে এনে বাস্তুভিটায় সমাহিত করার দাবিও পূরণ হয়নি আজ অবধি।

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে এক জমিদার পরিবারে রোকেয়ার জন্ম। তিনি রোকেয়া খাতুন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মিসেস আর এস হোসেন নামেও লিখতেন এবং পরিচিত ছিলেন। ঊনবিংশ শতকে নারীরা যখন অবরোধবাসিনী, সেই সময়ে নারীর পরাধীনতার বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছেন।

বেগম রোকেয়ার ছিল দুই ভাই ও দুই বোন। বাবা জহির উদ্দিন মুহম্মদ আবুল আলী হায়দার সাবের, মা রাহাতুন্নেছা চৌধুরানী। বড় ভাই ইবরাহিম সাবের ছিলেন একজন প্রগতিশীল মানুষ। অগোচরে মোমের আলোয় বেগম রোকেয়া ও আরেক বোন করিমনুন্নেছাকে বর্ণশিক্ষা দিতেন।

১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। রোকেয়া পেলেন আরেক জন প্রগতিশীল মানুষের সাহচর্য। স্বামী সাখাওয়াত হোসেন বেগম রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি অকুণ্ঠ আগ্রহ দেখে তাকে সাহায্য করতে লাগলেন বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষা ও লেখা-লেখিতে সাহায্য করতে লাগলেন।

এই শিক্ষাই তাকে সে সময়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবন, শিক্ষাহীন নারী সমাজের মুক্তির কথা ভাবিয়ে তুলেছিল। অশিক্ষার অন্ধকার থেকে কী করে নারীদের টেনে তোলা যায়, সে ভাবনা থাকতো তার মাথায়। আর তাই তো তিনি স্বপ্ন দেখলেন একটি স্কুলের। যেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা লেখাপড়া শিখবে। আর তার এ স্বপ্নকে আরও বড় করে তোলেন স্বামী সাখাওয়াত হোসেন।

১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্যের জগতে প্রবেশ। আর ১৯০৫ সালে রোকেয়া ইংরেজিতে লিখলেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সুলতানাস ড্রিমস’। সাখাওয়াত হোসেন লেখাটি পড়ে অভিভূত হয়ে পড়েন এবং তাকে উৎসাহ দেন লেখাটি বই আকারে প্রকাশ করার জন্য।

১৯০৮ সালে সুলতানাস ড্রিমস বই আকারে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে বইটি বাংলায় ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে রূপান্তরিত হয়েও প্রকাশিত হয়। এই বইটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইল ফলক হিসেবে গণ্য করা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো ‘অবরোধবাসিনী’, ‘মতিচুর’, ‘পদ্মরাগ’।

বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, বেগম রোকেয়ার সাড়ে ৩০০ বিঘা জমি বেদখল হয়ে আছে। কিছু জমিতে তার নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ জমিগুলো উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা উচিত।

বেগম রোকেয়ার ভাই মসিহুজ্জামান সাবেরের মেয়ে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষিকা রণজিনা সাবের বলেন, একটি দিনই মাত্র ঘটা করে বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করা হয়। বেগম রোকেয়ার প্রকৃত ইতিহাস ও কর্মময় জীবনী নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু করা উচিত।
দিবসটি পালনে রংপুরে নানা কর্মসূচি:

বেগম রোকেয়া দিবসে রংপুরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। তার জন্মস্থান মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এবার তিন দিনব্যাপী রোকেয়া মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আজ বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আগামীকাল বিকেল ৩টায় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ৫টায় পুরস্কার ও পদক বিতরণ, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নাটিকা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, বেগম রোকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও রংপুর রোকেয়া ফোরামসহ রংপুরের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।