নেত্রকোনা: ফেলে দেয়া মাথার চুলই এখন অনেক মানুষের জীবিকার অবলম্বন। পরিত্যক্ত চুল এখনকার দিনে আর ফেলনার বস্তু নয়।
নেত্রকোনার শিক্ষিত যুবক শরীফ আহমেদ দীর্ঘদিন ঢাকায় বায়িং হাউজে চাকুরির সুবাদে পরিচয় হয় বিভিন্ন দেশের বায়ারদের সঙ্গে। পরে তাদের পরামর্শে ফিরে আসেন নিজ জেলায় কিছু একটা করার তাগিদে। পৌর শহরের নাগড়া এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে শুরু করেন ‘বাংলাদেশ শরীফ হেয়ার ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট ট্রেডিং লি.’ নামে একটি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি।
মাত্র ৯ মাসে এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে বিভিন্ন বয়সী শত শত নারীর। শরীফের চুলের কারখানায় কাজ করে অনেক বেকার নারী একদিকে যেমন তাদের বেকারত্ব দূর করছেন, অপরদিকে সংসারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অনেক তরুণীই চালাচ্ছেন তাদের লেখাপড়ার খরচ।
কোম্পানির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, সারা দেশের বিভিন্ন ডিলারদের কাছ থেকে চুল সংগ্রহ করে প্রথমে জট পাকানো চুল সূচ দিয়ে জট ছাড়ানো হয়। এরপর উন্নতমানের শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর দৈর্ঘ্য অনুযায়ী প্যাকিং করা হয়। সর্বনিম্ন ৬ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৩০/৩৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা চুল বাজারজাত করা হয়। প্রতি কেজি চুল প্রকারভেদে ক্রয় করা হয় ৩ থেকে ৮ হাজার টাকায়। প্রক্রিয়াজাতের পর বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শরীফ আহমেদ বলেন, নিজ জেলা কৃষি প্রধান হওয়ায় এখানে বেকার নারীর সংখ্যাই বেশী। মূলত নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চিন্তা থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। বর্তমানে আমার কারখানায় পুরুষের পাশাপাশি প্রায় ৫শ’ নারী কাজ করেন।
সরকারি সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে এখানে ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক মো. আক্রাম হোসেন জানান, নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য শরীফ আহমেদ যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন, এটি আরও সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক সহায়তা ও বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূর করতে বেসরকারি এই উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারণ করতে সরকার এগিয়ে আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
এনএস