ফেনী: শান্ত নদী মুহুরী চলেছে এঁকেবেঁকে, মাহামায়া সেতুটি দুই জনপদকে এক করে সেতুবন্ধন হয়ে দাঁড়িয়ে। পাশেই ফসলের খালি মাঠ, আমন ধান উঠার পর শীতের এই সময়টায় জমিগুলো খালিই পড়ে রয়।
সন্ধ্যা নামার পর হাড় কাঁপানো শীতে প্রাণ-প্রকৃতির চারপাশটা যখন জড়োসড়ো হয়ে উঠছিল ঠিক সেই সময়টা বাঙলা বাউলিয়ানা গানে মেতে উঠেছিল গ্রামের শিশু, তরুণ ও প্রবীণরা। দূর-দূরান্ত থেকেও এসেছেন অনেকে।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) মহামায়া ইউনিয়নের মহামায়া সেতুর পাশের ফসলি জমিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই শীতের আকাশ আলোকিত হয়েছে ফানুসের রংয়ে। বাজির শব্দে জেগেছে শান্ত গ্রাম সেজেছে আকাশ।
আয়োজক বিনোদন সাংবাদিক নুরুল করিম জানান, প্রথমে এটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজনে করার পরিকল্পনা ছিল। পরবর্তীতে দারুণ এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চাঁদগাজী হাইস্কুলের ছাত্র সংসদ। সবার সমন্বয়ে শীতের রাতে প্রাণে মিলেছে প্রাণ।
ব্যতিক্রমী এই উৎসবের বিষয়ে এই তরুণ বিনোদন সাংবাদিক জানান, একটা সময় গ্রামে জারি, সারি, যাত্রাপালাসহ নানা ধরনের উৎসব হতো। সেসব উৎসবে মানুষ মেতে উঠতো। প্রযুক্তির প্রসারে প্রাণের সেসব উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে আমরা চাই উৎসবের সেই দিনগুলো ফিরে আসুক। মানুষ অল্প কিছুক্ষণের জন্য হলেও মোবাইল স্ক্রিন থেকে মুখ ফিরিয়ে বাংলা গান, কবিতায় মন দিক।
করিম জানান, গ্রামের এই গহীনে শীতের উৎসবটি করতেও কম বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়নি। একটা জায়গায় অনুষ্ঠান করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরও সেখানে করা যায়নি। কিছু মানুষ এর বিরোধিতা করে। এরপর সব কাঠামো ভেঙে আরেকটা জায়গায় আয়োজন করতে হয়েছিল।
অনুষ্ঠান দেখতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার স্বর্ণা বলেন, এ ধরনের উৎসব গ্রামকে জাগিয়ে তুলবে। অন্ধকার আর সামাজিক গোঁড়ামিকে দূর করে সমাজে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনবে।
স্থানীয় চাঁদগাজী স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ ফয়জুল্লাহ এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। গানের দল ‘মনের মানুষ’, কন্ঠশিল্পী দীপা চৌধুরী, কবিতা আবৃত্তি করেন আর্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর আবৃত্তিকার সুরঞ্জিত নাগসহ শিল্পীরা। এছাড়াও হিম হেঁয়ালির এই উৎসবে ছিল শীতের পিঠাপুলির আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
এসএইচডি/এএটি