ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো গবেষণা

অলি-গলি ও প্রধান সড়কে যানজটে অতিষ্ট কর্মজীবীরা

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩
অলি-গলি ও প্রধান সড়কে যানজটে অতিষ্ট কর্মজীবীরা

ঢাকা: রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছেন জরুরি কাজে বের হওয়া কর্মজীবীরা। যানজটের এই চিত্র দিনদিন ভয়াবহ হচ্ছে।

প্রধান সড়কগুলোতে যানজট তো আছেই পাশাপাশি অলি-গলিতেও এখন যানজটে দীর্ঘ সময় নষ্ট হচ্ছে কর্মজীবীদের। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো গবেষণাও।

বিশেষ করে অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এ সময় রাজধানীতে তীব্র যানজট থাকে। এসময় একটি মোড় অতিক্রম করতে যানবাহনগুলোকে ৪ থেকে ৫ টি সিগনাল অপেক্ষা করতে হয়।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিসমুখী যাত্রীদের যানজটের এমন ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। এদিন রামপুরা, খিলগাঁও রেলগেট, মৌচাক, মগবাজার, ফকিরাপুল, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট -বিজয় সরনি এবং সাইন্সল্যাবসহ প্রায় সব এলাকায় ছিল তীব্র জানজট।

সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত অব্যবস্থাপনার কারণেই নগরীতে যানজট আরও তীব্রতর হচ্ছে। বিআরটিএ বেপরোয়াভাবে যানবাহন নিবন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশে যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার গবেষণা নেই। এছাড়া সড়কের বড় অংশজুড়ে পার্কিং ও অস্থায়ী দোকানপাট এবং চালকেরা ইচ্ছামতো বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর  কারণে মূলত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

মিরপুরের পল্লবী থেকে প্রেসক্লাব বা মতিঝিলের দিকে আসতে একজন যাত্রীকে অন্তত চার যায়গায় তীব্র যানজটে পড়তে হয়। মিরপুর ১০, বিজয় স্মরণি, ফার্মগেট থেকে কাওরানবাজার এবং শাহাবাগ থেকে মৎস্য ভবন এসব স্থানে অফিসসময়ে তীব্র যানজট থাকে এমনটাই জানিয়েছেন এ রুটে নিয়মিত যাতায়াত করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোবায়ের আহমেদ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আজ (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপুরের পল্লবী থেকে রওনা হই পল্টনের উদ্দেশ্যে। এ পথে মোটরসাইকেলে পৌঁছাতেই সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। সাধারণত এতটুকু পথ ৪০-৪৫ মিনিট লাগবার কথা।

যানজট না থাকলে মোটরসাইকেলে রাজধানীর বনশ্রী থেকে পল্টন বা প্রেসক্লাবে যেতে ১৫-২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু আজ সকাল ৯ টার দিকে এই পথ যেতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে বলে  জানিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। শুধুমাত্র যে বনশ্রী, মিরপুর, পল্টন বা মতিঝিল এলাকাতেই যানজট থাকে বিষয়টা এমন নয়। রাজধানীর অন্যান্য অংশের অবস্থাও প্রায় একই। কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। অবশ্য মোটরসাইকেল যাত্রীদের থেকে বাসের যাত্রীদের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।

সকালে সরেজমিনে বাড্ডা থেকে রামপুরার আবুল হোটেলের সামনের অংশ পর্যন্ত পুরো সড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ দেখা যায়। যানবাহনগুলোর গতি এমন ছিল যে, হাঁটার গতিও এর থেকে বেশি। অন্যদিকে বিকেলেও রয়েছে প্রায় একই চিত্র। ফেরার পথেও মানুষে ভোগান্তির শেষ নেই।

ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১১৯৩০৯) বাসচালক সুজন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই জ্যামের কারণে দুই থেকে তিনটা ট্রিপ মারতেই সারাদিন চইলা যায়। খরচ উঠাইতেই কষ্ট হয়ে যায়। এই জ্যাম সারা দিনটারে মাইরা দেয়। ’

এই যানজট শুধুমাত্র মানুষের কর্মঘণ্টাই নষ্ট করছে না, পাশাপাশি বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিও করছে। যা আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আকাশ পরিবহনের বাসের যাত্রী আজগর আলী জানান, সকালে অফিস সময়ের মধ্যে তার মতিঝিল পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু বাড্ডা এলাকায় যানজটের কারণে ৩০ মিনিট দেরি হয়েছে। ফলে যে কাজের জন্য তিনি যাচ্ছিলেন সেটা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

যানজটে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাস্তায় রিকশা এবং বাসগুলো কিছুক্ষণ পরপর থামার কারণে মূলত দেরি হচ্ছে। আর সিগন্যালগুলোতে দীর্ঘ সময় বসে থাকলেও ছাড়ার নাম নেই।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পিক আওয়ারে দুটি রাস্তা একসঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে যদি কারো যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে অনেকটা রাস্তা তাকে ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো বৈজ্ঞানিক মেথড ব্যবহার করা হয় না। যা এখন থেকে আমাদের করতে হবে এবং এটা সময়ের দাবি।

আমাদের ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সড়ক হচ্ছে ডাবল রোড। এছাড়া বহির্বিশ্বে অনেক যায়গায় ডাবল রোড আছে৷ সেসব দেশে ডাবল রোডে দেখা যায় অফিস টাইম বা পিক আওয়ারে দুটো রাস্তাকে এক সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়। যখন অফ পিক তখন দুটো রাস্তাকে আলাদা করে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এমন কোনো বৈজ্ঞানিক মেথড ব্যবহার করা হয়নি, এমনকি আবিষ্কারও করা হয়নি।

দেশের যানজট নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের গবেষণা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যানজট নিয়ন্ত্রণে মূলত দুটি সংস্থা কাজ করে। ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন ঢাকা যানবাহন সমন্বয়ন কর্তৃপক্ষ। তাদের মূলত গবেষণা করার কথা। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির কোনো গবেষণা সেল নেই। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কোনো পর্যবেক্ষণও নেই। মোট কোথায় এগুলো চলছে আল্লাহর ওয়াস্তে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এই বিষয়ে গবেষণা করা দরকার যে, পিক আওয়ার এবং অফ পিক আওয়ারে কোন রাস্তায় কী পরিমাণ ট্রাফিক হয় তার ওপর গবেষণা করে ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা দরকার। এটা এখন সময়ের দাবি মাত্র।

যোগাযোগ বিশ্লেষকদের মতে, একটি আদর্শ শহরে কী পরিমাণ রাস্তা থাকবে, কী পরিমাণ যানবাহন থাকবে এবং কী পরিমাণ যাত্রীর মুভমেন্ট হবে- তার তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে থাকা দরকার। কিন্তু বিআরটিএ বেপরোয়াভাবে যানবাহন নিবন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যানবাহনের একটা ফিলিং বিদ্যমান থাকে। আমাদের এখানে কেবল অটোরিকশার ফিলিং বিদ্যমান রাখে, অন্যান্য যানবাহনকে বেপরোয়া ভাবে নিবন্ধন দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। যেটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩
ইএসএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।