ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মায়ের সঙ্গে আসামির ফোনালাপে বেরিয়ে এলো হত্যারহস্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
মায়ের সঙ্গে আসামির ফোনালাপে বেরিয়ে এলো হত্যারহস্য সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া ঘটনার একটি দৃশ্য

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গত ২২ জানুয়ারি ভোরে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশের সড়কে ছুরিকাঘাতে খুন হন খলু মিয়া (২৮)।  ক্লুলেস সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভেদ করতে পেরেছে পুলিশ।

ঘটনার পর বিভিন্ন মামলায় ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। একপর্যায়ে পুরোনো এক ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মো. আরিফকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়।

আর গ্রেফতারের পর আরিফের সঙ্গে তার মায়ের ফোনালাপের সূত্রে বেরিয়ে আসে সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারসহ তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নিহতের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ঘটনার বিবরণে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গত ২২ জানুয়ারি ভোরের সেই ঘটনার পর ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে থানা পুলিশ। তাতে দেখা যায়, ভিকটিম গোলাপবাগ থেকে পাঁয়ে হেঁটে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওৎপেতে থাকা অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ভিকটিমকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

ভিকটিমের কাছে প্রাপ্ত জিনিসপত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় জানা যায়, ভিকটিমের নাম খলু মিয়া (২৮)। তিনি নারায়নগঞ্জের রূপসী এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সেদিন গাইবান্ধা থেকে সোনালী পরিবহনে করে রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটায় গোলাপবাগে পৌঁছান। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনি।

ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ক্লুলেস এ ঘটনার তদন্তে নেমে বেশকিছু ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করেও কোন কুলকিনারা করতে পারছিলো না থানা পুলিশ। ২৬ জানুয়ারি একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকার নিজ বাসা থেকে আরিফকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারের পর আরিফ তার মায়ের সঙ্গে ফোনালাপে জানায়, অন্য কোনো ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, আগের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার আরিফের এই বক্তব্যটি সন্দেহজনক হওয়ায় খলু মিয়া হত্যা মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর ভিত্তিতে আরিফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে খলু মিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য। একপর্যায়ে খলু মিয়াকে খুনের দায় স্বীকার করেন আরিফ, পরে তার হেফাজত থেকে খলু মিয়ার খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।

আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, একাধিক ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় আরিফ দীর্ঘদিন ধরে তার নিজ বাসায় অবস্থান না করে পলাতক ছিলেন। কিন্তু খুনের ঘটনার পরপর পুলিশী তৎপরতা দেখে হত্যার ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আগের ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হতে সে বাসায় অবস্থান করছিল।

ঘটনার সময় আরিফ অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে একটি ছুরিসহ ধলপুর নতুন রাস্তায় একটি ব্যাটারির দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিল। ভিকটিম রাস্তা দিয়ে আসার পথে তারা তার গলায় ছুরি ধরলে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ঘটনার একপর্যায়ে তারা ভিকটিমের বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ভিকটিমের মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় তারা।

গ্রেফতার আরিফ আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার অন্যান্য সহযোগীদের নাম-ঠিকানাও জানিয়েছেন।  

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
পিএম/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।