ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৪ শতাধিক অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন এলাকায়

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
৪ শতাধিক অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘরগুলোয় রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: কারও কারও ঘরে জ্বলছে বাতি। আবার কারও ঘরে এলইডি টিভি, ফ্রিজ।

তাদের মাসিক বিদ্যুৎবিল মাত্র ১০০ টাকা অথবা ২০০ টাকা। কারও কারওরটা আবার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বিদ্যুৎনির্ভর আরাম-আয়েশে কাটছে তাদের দিন!

তবে ওইসব ঘরে বিদ্যুতের কোনো মিটার নেই। মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার কত ইউনিট হলো তা উপায় নেই জানার। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় মাসের পর মাস অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও নামমাত্র মূল্য দিয়ে থাকেন এসব অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা।

দিনের পর দিন এভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে সুবিধা ভোগ করছেন এক শ্রেণির অসাধু মানুষ। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ এবং পূর্ব প্রান্তে গিয়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের অসংখ্য প্রমাণ মিলেছে। রেলওয়ে স্টেশনের সীমানাপ্রাচীর টপকে হাতের বাম দিকে যে খাবারের দোকান সেই দোকানের মালিকের নাম মোস্তফা মিয়া। মোস্তফা মিয়ার ভাতের দোকান হিসেবে এ দোকানটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত।  

মোস্তফা মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এদিকে কমপক্ষে ৩ শতাধিক দোকান এবং ঝোপরিবাড়িতে অবৈধবিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। দিনের পর দিন তারা এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। অথচ দেখেন আমি পল্লী বিদ্যুৎ থেকে অনেক টাকা দিয়ে সংযোগ নিয়েছি। বিলও আসছে অনেক বেশি। আমি যদি ওইরকম অবৈধ সংযোগ নিতাম তাহলে আমার মাসিক মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকায় হয়ে যেতো।

পূর্বদিকের সীমানাপ্রাচীর ঘিরেই আওয়াল মিয়ার চা-পানের দোকান। এখানেও বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়, তবে কোনো মিটার নেই। আর এখানের অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনটি যুক্ত রয়েছে রেলওয়ের ওভারব্রিজের লোহার একটি অংশ স্পর্শ করে। শটসার্কিটসহ অন্যান্য সমস্যা হলে লোহার এ পুরো ওভারব্রিজটিতে জড়িয়ে পড়বে। বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারাত্মক হতাহতের ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

প্রাণ হারাতে পারেন ওই ওভারব্রিজ দিয়ে পারাপারকারী সাধারণ কোনো মানুষ।       

পূর্বদিকের ঝোপরিঘরের বাসিন্দা শফিক মিয়া এবং অপর একটি ঘরের বাসিন্দা রোমেলা বেগম বলেন, আমিনি নামক এক নারী তাদের ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি এসে মাসে মাসে টাকা নিয়ে যান।

২০ বছর ধরে রেলের জায়গায় বাস করছেন বাবুল প্রধান নামক জনৈক বৃদ্ধ। তার বাড়ির একটি মিটার দিয়ে ৩টি ঘরে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তার মিটারের বিদ্যুৎ বিলটি পরীক্ষা করে দেখা গেল মিটারটি ইদ্রিস আলীর নামে। এ বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ডাক নাম ইদ্রিস মিয়া।

ঝোপরিঘরের অপর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মিয়া অকপটে স্বীকার করে বলেন, আমাদের এখানে (রেলের জমিতে) ৬টি ঘরে ৬টি পরিবার থাকে। এগুলোর সব দেখাশোনা করে বাবলি হিজরা। প্রতি মাসে সে এসে প্রতি ঘর থেকে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া তুলে নিয়ে যায়। আমাদের এখানে কোনো ঘরে বিদ্যুৎ মিটার নেই। তবে লাইট জ্বলে, ফ্যান-টিভি চলে।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ৪ শতাধিক ভাসমান দোকান, ছোট টংদোকান এবং ঝুপরিঘরে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগের সঙ্গে লাইনম্যান লোকমান মিয়া এবং খালাসি হায়দার আলী জড়িত রয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুযোগসুবিধার ভিত্তিতে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আসছেন।

লাইনম্যান লোকমান মিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘আমি এগুলোর সাথে জড়িত না’ মোবাইল সংযোগটি তৎক্ষণিক কেটে দেন।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার মো. সাখাওয়াত বলেন, আমি শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বে এসেছি প্রায় দুই বছর হলো। শুনেছি স্টেশনের আশেপাশে কিছু অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আসলে আমার কাজের মধ্যে পড়ে না। আমিও চাই এই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হোক।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), শ্রীমঙ্গলের সভাপতি দীপেন্দ্র ভটাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, সমাজে একটা শ্রেণি আছে সবকিছুর মধ্যে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ তারই একটি নমুনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র সোচ্চার হয় তবেই হয়তো এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে সংলগ্ন আশপাশের বিভিন্ন দোকানকোঠা বা বসতঘরসমূহে যদি কোনো অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সেগুলো বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
বিবিবি/এসএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।