ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেড়েছে তাপমাত্রা সঙ্গে ধুলা, জনগণের চরম ভোগান্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
বেড়েছে তাপমাত্রা সঙ্গে ধুলা, জনগণের চরম ভোগান্তি

ঢাকা: শীত শেষ, বসন্ত এসেছে আজ ১৭ দিন। প্রখর হতে শুরু করেছে রোদ্রতাপ।

আর শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় সর্বত্র বেড়েছে ধুলা। এ দুই মিলিয়ে ভোগান্তিতে শিশু-বৃদ্ধ, আবাল-বনিতা। বিশেষ করে রাজধানীর মানুষ দিচ্ছে সহ্যের পরীক্ষা।

ঢাকার সড়কে পরিবহন চলাচল পরিস্থিতি ভয়াবহ। এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় চলছে সংস্কার কাজ। এতে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের নাকে মুখে ঢুকছে ধুলা-বালু; এতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বাসা বাড়িতেও ধুলাবালি উড়ে গিয়ে শিশু-বৃদ্ধরা অসুস্থ হচ্ছে। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের খড়্গ তো আছেই।

বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাপমাত্রা। আশির দশক থেকে প্রতি বছর তাপমাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছয়। গ্লোবাল বিবিসির এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা যত বাড়ছে, তত বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর চেনা জলবায়ু। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসছে আরও ঘন ঘন, আরও বেশি ধ্বংস শক্তি নিয়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড বলছে, গত ছয় দশকে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। এই ধারা চলতে থাকলে আগামী তিন দশকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই পরিমাণ ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ১৯৬০ থেকে শুরু করে ২০২০ সাল- এ সময়ে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। স্থান বিশেষে এর পরিবর্তন আসতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেড়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গড় তাপমাত্রা এ অঞ্চলে শূন্য দশমিক ৭ থেকে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি।

গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি মহানগর এলাকাগুলোয় তাপপ্রবাহের প্রবণতাও বেড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখা দিচ্ছে ঘন ঘন, ধরনও পাল্টেছে। এ বিষয়ে রাজধানী ঢাকার হাতিরপুল এলাকার স্থায়ী প্রবীণ বাসিন্দা মো. আব্দুর রউফ বলেন, আগের তুলনায় এখন গরম দীর্ঘ সময় থাকছে, বেড়েছেও। আবার শীতকালেও তাপমাত্রা বেশি থাকছে। বৃষ্টি হচ্ছে ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে ঋতু বৈচিত্র্য এলোমেলো হয়ে গেছে। এর একটা বড় প্রভাব সহ্য করতে হচ্ছে রাজধানীর মানুষকে। এমনিতেই কল-কারখানা, গাড়ি আর অতিরিক্ত মানুষে রাজধানীতে গরমের পরিমাণ বেশি। এখন আবার যুক্ত হয়েছে ধুলা-বালু।

বসন্তের এ সময়টায় বৃষ্টি নেই। সময়টা উপভোগ্য হলেও প্রধান বিড়ম্বনা ধুলা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলা নির্মাণকাজ এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। বলা চলে ঢাকা এখন ধুলার নগরী। বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ, মেট্রোরেলের কাজ, রাস্তা সংস্কার, তিতাস ও ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িসহ নানা কারণে বাড়ছে এ ভোগান্তি। তার ওপর সড়কে বাস, সিএনজি, প্রাইভেট গাড়ির কালো ধোঁয়া পথচারীদের অসুস্থ করে ফেলছে।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘক্ষণ যানজটে গরমে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে শরীরে ঘাম জমে আবার তা শরীরেই শুকাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফুটপাত দখল, রাস্তা ব্যবহারে স্বেচ্ছাচারিতা-দখলের কারণে সড়কে জট বাধে প্রবল আকারে। তার ওপর সড়ক ব্যবহারে চালকরা নীতিমালা মেনে চলে না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বহু আগে থেকেই দুর্বল। যে কারণে দীর্ঘক্ষণ রাজধানীতে যানজট লেগে থাকে।

সরকার ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেও কাজে আসছে না। কারণ, সিএনজি-রিকশা চালকদের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়, আর সেটি থেকে থাকে যত্র-তত্র বাস থামিয়ে রাখায়, রাস্তার মাঝ থেকে যাত্রী তোলা-নামানোয়। এ সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই ঠিক হবে না। এতে জটিল ও কঠিন রোগের আশঙ্কা থেকেই যায়।

ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে। বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের মতে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হল- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। সেদিক থেকে মাসের অধিকাংশ দিনই বায়ু দূষণের সূচকে বিশ্বে ঢাকার অবস্থান থাকে তালিকার প্রথমেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধুলার মাধ্যমে বাতাসে নানা রোগের জীবাণু ছড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। এছাড়া শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশিসহ ফুসফুসের নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ধূলাদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তার উৎসগুলোকে বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে নতুন করে আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন জরুরি। এজন্য শুরুতেই দরকার দায়হীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে নগরবাসীর কল্যাণসম্মত ভাবনা।

সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে বর্ষাকালের চেয়ে সংক্রামক রোগের বিস্তার অন্তত ২০ শতাংশ কম দেখা যায়। তবে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা বাড়ে। তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা ৫. দশমিক শতাংশ এবং আর্দ্রতা ১ শতাংশ বাড়লে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক আহমেদ বলছেন, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে অনেকগুলো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সব কিছু মূলত স্বাস্থ্যের ওপরই প্রভাব ফেলবে। ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রধান শিকার হচ্ছে মানুষ, প্রাণী। এটা অনিশ্চিত।

তিনি আরও বলেন, আগে তো ভাবতাম জ্বর সিজনে আসে; এখন যে কোনো সময় হতে পারে। বৃষ্টির পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়বে, নানা রোগবালাইও বাড়বে। জলবায়ুজনিত পরিস্থিতির শিকার হয়ে নতুন নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। কীট পতঙ্গবাহিত রোগ, ডেঙ্গু থেকে শুরু করে চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর- এসব বেড়ে যেতে পারে।

তার মতে, সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হবে প্রান্তিক মানুষের পুষ্টির সমস্যা। স্বাস্থ্যকে কেন্দ্রে রেখে আগামীতে পরিকল্পনা না করলে নতুন সঙ্কটের জন্ম হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।