ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আনন্দের রং ছড়ানো রঙিন কম্বল

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৩
আনন্দের রং ছড়ানো রঙিন কম্বল রঙিন কম্বল পেয়ে আদিবাসী শিশুটির মন জুড়ানো হাসি

বিয়ের ২৪ বছরের মাথায় তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে মারা যান স্বামী। সেই থেকে জীবনযুদ্ধে একাই লড়াই করছেন ষাটোর্ধ্ব আছিয়া বেগম।

বহুকষ্টে সন্তানদের বড় করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন তিন মেয়ে ও ছেলেদের। মেয়েরা সবাই অর্থকষ্টে কোনো রকমে জীবন যাপন করছেন। ছেলেদের কাছে ঠাঁই হয়নি আছিয়ার। অন্যের জায়গায় তোলা ছোট্ট একটি খুপরি ঘরই তাঁর মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই। সারা দিন ভিক্ষা করে রাতে ঘুমাতে গেলেই অসহ্য শীতে জবুথবু হয়ে থাকতে হয়। এমনিতেই মাটিতে বিছানা পেতে ঘুমান, তার ওপর ভাঙা ঘরের চারদিক থেকে তীব্র শীতল হাওয়া তাঁকে বরফের মতো জমিয়ে ফেলতে চায়। চটের ছালা আর কাঁথা দিয়ে রাত পার করলেও শরীরে হাড্ডিতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। একটি কম্বলের জন্য মানুষের কাছে অনেক ঘুরেছেন। অবশেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি কম্বল পেয়ে তাঁর চোখের পানি আর মুখের হাসি শুভসংঘের বন্ধুদের মাঝে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগায়। প্রচণ্ড এক ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় সবাইকে।

‘আমি ভিক্ষা করি, মাটির মইধ্যে ঘুমাই। এই শীতে কেউ আমারে কম্বল দেয় নাই। বসুন্ধরা গ্রুপ আমারে কম্বল দিছে। কম্বল পাইয়া আমি খুব খুশি। আল্লায় হেগো মঙ্গল করব। ’ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় কালের কণ্ঠ শুভসংঘের উদ্যোগে কম্বল পেয়ে আনন্দে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন আছিয়া বেগম। জানুয়ারিতে সারা দেশে ছিল শীতের তীব্রতা। প্রচণ্ড শীতে দরিদ্র মানুষের দুর্দশা ছিল চোখে পড়ার মতো। শুভসংঘের উদ্যোগে প্রতিবারের মতো এবারও সারা দেশে ১৮ হাজার অসহায়, শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো বসুন্ধরা গ্রুপের উষ্ণতার ছোঁয়া। কম্বলের উষ্ণতায় শিশু ও প্রবীণের মুখে দেখা দিয়েছে আনন্দের হাসি। শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামানের সঙ্গে জেলা-উপজেলার বন্ধুরা হাতে হাত রেখে একযোগে সারা দেশে কাজটি সম্পন্ন করেছেন।

ছোট্ট শিশু মো. শাহীন। তিন বছর বয়সে তার মা মারা যাওয়ার পর আবার বিয়ে করেন বাবা। কোরআনে হাফেজ বানানোর স্বপ্ন নিয়ে অসহায় শাহীনকে ভর্তি করা হয় একটি মাদরাসা ও এতিমখানায়। বেশির ভাগ এতিম শিশুর ভরণ-পোষণ ও শিক্ষার অর্থ জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছেন মাদরাসার মুহতামিম। কনকনে ঠাণ্ডা সকাল আর কুয়াশার তীব্র শীতের রাতে শিশুরা যখন জড়সড়, তখন তিনি অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকেন। শাহীনের মতো অনেক শিশুই তখন শীতে কাঁপছিল। খবর পেয়ে শুভসংঘের বন্ধুরা কয়েকটি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।

দীর্ঘ এক মাস বসুন্ধরা গ্রুপের উষ্ণতার ছোঁয়া নিয়ে অসহায় শীতার্ত ১৮ হাজার মানুষের শীত নিবারণে শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামানের সঙ্গী ছিলেন জীবন, রাফি, আবিরসহ আরো কয়েকজন এবং শাখা শুভসংঘের বন্ধুরা।

আয়েশা বেগম। বয়স ৮০ পেরিয়েছে একাত্তরের এই বীরাঙ্গনার। একাত্তরে হারিয়েছেন সব, পরিবার থেকে হয়েছেন নিগৃহীত। কপালের ভাগ্যরেখা একাত্তরেই মুছে গিয়েছিল তাঁর। ভাগ্যদেবী যেন জীবনসায়াহ্নেও বিমুখ এই অসহায় মানুষটির ওপর। কনকনে এই শীতে গায়ে জড়ানোর মতো একটা কম্বলও নেই। তাঁর মতো নির্মম ভাগ্যহীন কপাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আরো ১৪ জন বীরাঙ্গনার। এসব দরিদ্র মানুষকে একটু উষ্ণতার ছোঁয়া দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে এবং কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্বে সারা দেশে কাজ করে শুভসংঘ। আমরা এবারের শীতে উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশের বেশ কিছু জেলায় ১৮ হাজার কম্বল বিতরণ করেছি শুভসংঘের মাধ্যমে। এতিম শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, বীরাঙ্গনাসহ সব মানুষের কাছে আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের এই উপহার পৌঁছে দিয়েছি। সবাই বসুন্ধরার চেয়ারম্যান মহোদয়ের জন্য দোয়া করেছেন। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় আমাদের এই ভালো কাজের ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখব। শুভ কাজে সবার পাশে থাকার যে আনন্দ, যে প্রশান্তি তা বলে বোঝাতে পারব না। রঙিন কম্বলে এতিম শিশু, বৃদ্ধ ও মাঝবয়সী অসহায় মানুষের হাসিতেও যে আনন্দের রং, তা পৃথিবীর যেকোনো রঙের চেয়ে আরো সুন্দর, আরো উজ্জ্বল, আরো আলোকিত। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার, এমডি স্যারসহ তাঁদের পরিবারের সবার জন্য প্রতিটি মানুষ দুই হাত তুলে দোয়া করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৩
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।