ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ঐক্যবদ্ধভাবে ৭ মার্চের অন্তর্নিহিত কথা, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র বাস্তবায়ন করবো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৩
‘ঐক্যবদ্ধভাবে ৭ মার্চের অন্তর্নিহিত কথা, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র বাস্তবায়ন করবো’ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ফের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসম্পন্ন অর্থনৈতিক মুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৭ মার্চের অন্তর্নিহিত কথা, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করবো বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।  

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় দিবস ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। অনুষ্ঠান জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয়। এরপর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, যারা এদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে তাদের কাছে ৭ মার্চের ভাষণ একটি নির্দেশিকা। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু অর্থনীতি মুক্তির কথা বলেছেন। মানুষের মুক্তি, সেই মুক্তির নির্দেশিকা এখানে আছে। আজও আমরা সেই অর্থনৈতিক মুক্তি পায়নি।  

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু বাকশাল করেছিলেন। বাকশালের দুইটা অংশ ছিলো, একটা রাজনৈতিক, আর একটা অর্থনৈতিক। রাজনৈতিক অংশ আমরা পরিহার করেছি। কারণ আজকের প্রেক্ষাপট বঙ্গবন্ধু আর নেই, যার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য হতে পারে। সে জন্য পরবর্তী যে অংশ অর্থনৈতিক মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তির যে কর্মসূচি দিয়েছিলেন, সেই কর্মসূচি যতদিন বাস্তবায়িত না হবে ততোদিন স্বাধীনতা বা ৭ মার্চ অর্থবহ হবে না।

মন্ত্রী বলেন, আজকে সেই অর্থনৈতিক মুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধু নেই, তার আদর্শ উত্তরাধিকার সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা আছেন। তার নেতৃত্বে আমরা আগামীদিন ঐক্যবদ্ধ থেকে, যেমনিভাবে ৭০-এ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, তেমনিভাবে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসম্পন্ন অর্থনৈতিক মুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৭ মার্চের অন্তর্নিহিত কথা, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করবো।

৭ই মার্চ ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব কিছুই বলে গেছেন উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, যারা আজকে বলতে চায় আমাদের প্রস্তুতি ছিলো না, তাদের উদ্দেশ্য একটাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চায়। এখনো শুনতে হয় পাকিস্তান আমল এর থেকে ভালো ছিলো। কোন সূচকে? আজকে বিনয়ের সঙ্গে তাদের কাছে আমি জানতে চাই, জাতি জানতে চায় কোন সূচকে পাকিস্তান এর থেকে ভালো ছিলো?

তিনি বলেন, এক মাস আগেও বলেছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বিরোধী দলের দায়িত্বশীল নেতা মধ্যে মধ্যে বলে ৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। আমরা বলতাম, বলি- ‘৭১-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’। অর্থ পরিষ্কার, ৭১-এর হাতিয়ার গর্জে উঠেছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর ৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠেছিল বলে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতা নিহত হয়েছিলেন। তারা আজও স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নেয় না, ৭ মার্চের ভাষণকে তারা স্বীকার করে না।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুব হোসেন বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের আজও অনুপ্রেরোনার উৎস, সাহসের প্রতীক। এটা এভাবেই থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সময়ের পরিক্রমায় অনেক অন্ধকার পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ আলোর পথের অগ্রযাত্রী। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। তবে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা অপার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। দারিদ্রতা থেকে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রী হয়েছি। আমাদের যেতে হবে অনেক পথ, প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে হতে হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। এ পথে বাধা আছে আরো আসবে। তবে আমাদের দৃঢ় মনোবল শক্তির জায়গা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় প্রত্যের মতো আমরা ধারণ করি কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।

সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতীর জীবনে অবিস্মরণীয় দিন। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন। তা ছিলো মূলত বাঙালি জাতির স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্খার এক মহাকাব্য। এই ভাষণের প্রতিটি শব্দ ছিল বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা,আর তার হৃদয়ের উচ্ছ্বলিত তেজশ্রীত সম্মোহিত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। এই ভাষণ শুধু বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের দলিল নয়। এভাষণ বাঙালির মুক্তির চেতনার প্রতীক। সেদিন এই ভাষণের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে আগুণ জ্বালিয়ে ছিলো, ঐক্যবদ্ধ করেছিলো রক্ত শপথে এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলো।  

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ১৮ মিনিটের ভাষণে প্রতি মিনিটে ৫৮ থেকে ৬০ টি শব্দ উচ্চারণ করেছেন। এই ভাষণ পৃথিবীর সব ভাষণের মধ্যে কালজয়ী ইতিহাস হয়ে আছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০টি ভাষণের মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিলো অলিখিত৷ বাকি ৯ টি ভাষণ ছিলো লিখিত। এই ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম রণকৌশলের দলিল। পৃথিবীতে যতোদিন পরাধীনতা থাকবে ততোদিন বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৩
জিসিজি/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।