খুলনা: রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালুসহ ৬ দফা দাবিতে পাটকল রক্ষায় সংবাদ সম্মেলন করেছে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাট চাষ এবং পাট শিল্পের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি জড়িত। বাংলার পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাট। উন্নত মানের পাটের যোগান সহজলভ্য হওয়ায় পাকিস্তান আমলে পাট শিল্প ছিল একক বৃহত্তম শিল্প। ২০২০ সালের ২ জুলাই সরকার ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয়। মিল বন্ধের দুই মাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত অনেক শ্রমিক এরিয়াসহ তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি। খুলনার খালিশপুর জুটমিল ও দৌলতপুর জুটমিল, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুটমিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি ও আর আর জুটমিলের শ্রমিকরা এখনো বকেয়া কোনো টাকা পায়নি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সাথেও পাট শিল্প শ্রমিকরা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। স্বাধীনতার পর ৭৭টি পাটকল জাতীয়করণ করার মধ্য দিয়ে বিজেএমসির যাত্রা শুরু হলেও তা বাড়িয়ে ১৯৮২ সালে বিজেএমসির অধীনে পাটকল ছিল ৮২টি। কিন্তু তারপর থেকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর পরামর্শে এই পাটকলগুলো বন্ধ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে আমরা এই ষড়যন্ত্রের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি এবং আপনারাও তা স্পষ্ট করে জানেন। অথচ ১২শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এই পার্টকল গুলোকে লাভজনক করা সম্ভব বলে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে এবং সরাসরি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার তা বিবেচনায় নেয়নি। ২০১০ সালে পাসকৃত ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ বাস্তবায়নে সরকারের জোর তৎপরতা আমরা দেখিনি।
এসবের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়। অর্থের অভাব এই পাটকলগুলো বন্ধের কারণ নয়। অলাভজনক অনেক খাতে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে, বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকির নামে ব্যক্তিমালিকদের লুটপাট করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, প্রতিবছর প্রায় লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে সীমাহীন লুট চলছে, ব্যাংকের খেলাপিঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে, পাটকল বন্ধ করার পরও প্রতিবছর বিজেএমসি কর্মকর্তাদের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আসলে পাটকলগুলোর সম্পদের প্রতি এদেশের বড় পুঁজিপতিদের নজর পড়েছে।
এখন সরকার লিজ দিতে চাইলেও একদিকে বৈশ্বিক বাজার সঙ্কটে নতুন কারখানা স্থাপনে সময় নেওয়া এবং লিজ নীতিমালাকে সরকারের সাথে যোগসাজশে আরও সহজ করার ষড়যন্ত্র চলছে।
পরিষদ ঘোষিত ৬ দফা দাবি-
৫টি পাটকল (খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুটমিল, জাতীয় জুটমিল, কেএফডি, আরআর) শ্রমিকসহ যেসব শ্রমিকরা এখনও তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি তাদের পাওনা আগামী ঈদুলফিতরের আগে পরিশোধ করতে হবে। যেসব শ্রমিকরা সঞ্চয়পত্রের কাগজ পাননি তাদের অবিলম্বে তা হস্তান্তর করতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করতে হবে। লোকসানের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং লুটপাটকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ শাস্তি দিতে হবে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে এবং তাদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দিতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি নিত্যপণ্যের বাজারদর, শ্রমিক ও তার পরিবারের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় উপাদানের মূল্য, দক্ষতা এবং ব্যয়িত শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদনে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করতে হবে।
‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ বাস্তবায়ন করতে হবে। সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে পাট থেকে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের জন্য গবেষণাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে।
বিজেএমসির মাথাভারি প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত জনবল ছাঁটাই করতে হবে। পাট মন্ত্রণালয়ের অযাচিত খবরদারি বন্ধ করে রাষ্ট্রায়ত পাটকল পরিচালনা সংস্থাটিকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পাটকল পরিচালনা সংশ্লিষ্ট দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের পদায়ন করতে হবে। পাটকলগুলোর কর্মকর্তাদের দায়িত্বকে শ্রমিকদের কাছে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
পাটকল রক্ষা আন্দোলনের নেতাদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
এমআরএম/এএটি