সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পুলিশের সামনেই প্রতিপক্ষের ওপর এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় এমপি ও মেয়র গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমপির সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন স্থানীয় দুই সাংবাদিক।
শনিবার (১৩ মে) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে বেলকুচি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিপন আহমেদকে আশংকাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও যুবলীগ সদস্য রিপন চক্রবর্তী, আওয়ামীলীগ নেতা পাভেল, মনসুর আহাম্মেদ, শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব সরকার, সাব্বির হোসেন, নাবিন মন্ডল, আব্দুস সালাম, রতন, ওমর ফারুক স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিকেলে বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজাসহ নেতাকর্মীরা পার্টি অফিসের সামনে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করেই সেখানে পুলিশ আসে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এমপি মমিন মন্ডলের ব্যক্তিগত সহকারি সেলিম সরকারের নেতৃত্বে মোতালেব, আলমাছসহ ৩০/৩৫ জনের একটি গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ে মিটিং করতে চায়। এ সময় দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় এমপি সমর্থকরা থানার ওসির সামনেই রেজা সমর্থকদের মারধর করে। বাধা দিতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে এমপি সমর্থকরা মিছিল নিয়ে চালা গ্যারেজ এলাকায় পত্রিকার এজেন্ট দৌলত মন্ডলের দোকান ভাংচুর করে এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিপন আহমেদকে হাতুড়িপেটা করে।
মিছিলের ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে একাত্তর টিভির বেলকুচি সংবাদ সংগ্রাহক উজ্জল অধিকারীকে মারধর করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বেলকুচি প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক বাবু বলেন, আমিসহ চার সাংবাদিক দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ করে এমপি মমিন মন্ডলের সমর্থক রিজন ও হোসেন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে রিজন আমার উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা চলে যায়। মিছিল নিয়ে বের হয়ে তারা সাংবাদিক উজ্জল অধিকারীকে মারধর করে।
বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা অভিযোগ করে বলেন, বিকেলে পার্টি অফিসের সামনে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে পিএস সেলিমের নেতৃত্বে বেলকুচি থানার ওসির সহযোগিতায় এমপির লোকজন বাটাম নিয়ে আমাদের লোকজনকে মারধর করে। ওসি নিজেই এমপির হয়ে অ্যাকশন শুরু করে।
বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানূর বিশ্বাস বলেন, দলের সাবেক সেক্রেটারি ফজলুল হক সরকার বিভিন্ন ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দকে তিনি ফোন করে পার্টি অফিসে মিটিংয়ের জন্য ডাকছিলেন। বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাকে ফোন দিয়ে বললাম দলের সভাপতি এমপি মমিন মন্ডল দেশের বাইরে, আমিও ঢাকায় রয়েছি। আপনি তো দলের কোন নেতা না, তবে মিটিং ডাকছেন কেন। তিনি বলেন সভাপতির নির্দেশে প্রতিবাদে সভা ডেকেছেন। আমি তাকে বললাম প্রতিবাদ সভা পার্টি অফিসে না করে রাস্তায় করেন। কিন্তু তারপরও তারা পার্টি অফিসে গিয়ে মারামারি করেছে। বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার বলেন, এমপিকে তোরণ সরাতে মেয়র নোটিশ দিয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা ডাকা হয়। দলের নারী কর্মীরা সাড়ে তিনটায় আসে। কিন্তু আগেই মেয়রের লোকজন এসে তাদের ঢুকতে বাধা দেয়। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় এমপির লোকজন এলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। এরপর পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়ার পর আমরা প্রতিবাদ সভা করেছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, বেলকুচিতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার কথা শুনেছি।
এ বিষয়ে জানতে বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোনে বারবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ করেননি।
তবে বেলকুচি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনূর ইসলাম বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে
পড়ে। পরে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এসএএইচ