ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খননে প্রাণ পেল ‘মরা পশুর’, খুশি চাষী ও স্থানীয়রা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
খননে প্রাণ পেল ‘মরা পশুর’, খুশি চাষী ও স্থানীয়রা

বাগেরহাট: খননের অভাবে বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভরাট হয়ে দীর্ঘদিন ধরে নাব্য হারিয়ে মৃত প্রায় ছিল বেতাগা ইউনিয়নের মরা পশুরসহ সাত খাল। ফলে কৃষিজমিতে সেচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পানি সংকট ছিল ওই এলাকায়।

এছাড়া প্রতিবছর জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো হাজার হাজার মানুষকে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) খননে ভোগান্তি বাড়ানো মরা পশুরসহ এসব খালে এখন প্রাণ ফিরেছে। নাব্য হারিয়ে মৃতপ্রায় খালগুলোর এখন ভরা যৌবন। পানির স্বাভাবিক প্রবাহের ফলে  এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেচ সুবিধা সহজ হওয়ায় খুশি চাষী ও স্থানীয়রা।

এলজিইডি, বাগেরহাট কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, জন সাধারণের ভোগান্তি লাঘব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ২০২২ সালে টেকসই ক্ষুদ্রকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খালগুলো খননের উদ্যোগ নেয় তারা। ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ে মরা পশুর, খুমারখালী, ফ্যাইস্যাখালী, দাত্নেমারী, বাসাবাড়ি, গজার ও চাকুলির খাল নামের ৭টি খালের প্রায় ২০ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে কুমারখালী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. এর মাধ্যমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে খালগুলো খনন শুরু হয়। ইতোমধ্যে খননের প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ খুব দ্রুত শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নিয়মিত খনন কাজ দেখভাল করছেন এলজিইডি কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে খাল সংলগ্ন ৯টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ খননের সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেছেন। এছাড়া খালের আশপাশের প্রকৃতিতেও প্রাণ ফিরেছে। খাল খনন শেষ হলে এলাকার অন্তত এক হাজার হেক্টর জমিতে সহজে সেচ দিতে পারবেন চাষীরা। এসব কারণে খাল খননের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও উপকারভোগীরা।

বেতাগা ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের নিরাপদ বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার খালগুলো মৃতপ্রায় ছিল। এর ফলে আমরা শুকনো মৌসুমে যেমন পানি পেতাম না, তেমনি বর্ষ মৌসুমে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হত। খননের ফলে এখন খালগুলোতে যেমন পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হয়েছে, তেমনি আমাদেরও অনেক উপকার হচ্ছে।

বেতাগা গ্রামের ইনসান শেখ নামে এক কৃষক বলেন, পানি হচ্ছে চাষাবাদের প্রাণ। কিন্তু নদী-খাল যদি মৃত থাকে তাহলে পানি কোথা থেকে আসবে। খালগুলো খননে আমাদের যে কী উপকার হয়েছে তা বলে বুঝানো যাবে না।

কুদ্দুস শেখ নামে এক ব্যক্তি বলেন, একটা সময় ছিল আমরা মরা পশুরে গোসল করতাম, মাছ ধরতাম। কিন্তু ১০-১২ বছর ধরে মরা পশুরে বেশিরভাগ সময় পানি থাকতো না। খননের পরে নতুন পানি এসেছে। অনেক ভাল লাগছে, এখন আবার গোসল করতে পারব, মাছ ধরতে পারব। তবে খালগুলো যাতে দখল না হয়ে যায়, এদিকেও খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন ষাটোর্ধ এই কৃষক।

কুমারখালী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পদক নাজমুল হুদা বলেন, সমিতির তত্ত্বাবধানে সদস্যরা মিলে খালগুলো খনন করেছে। কোথাও নিজেরা হাতে মাটি কেটেছে, আবার কোথাও স্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। যেখান থেকে যেভাবে খনন করা প্রয়োজন, এলাকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এলজিইডির কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মত খনন করিয়েছে। ফলে এলাকার মানুষ খুব খুশি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাট জেলা কমিটির সদস্য এমএ সবুর রানা বলেন, শুধু একটি ইউনিয়নের খাল খনন করে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। জেলার সব নদী-খাল দখল মুক্ত করে, খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে সুদিন ফিরবে চাষাবাদে, সেই সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন বাড়বে।

বাগেরহাট এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম মেহেদী বলেন, সব ধরনের নিয়ম মেনে এবং এলাকাবাসীর সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা খাল খনন করেছি। এলজিইডির এই কাজে এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছে।

আর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি ও জমিতে সেচ সুবিধার জন্য এই খালগুলো খনন কাজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭টি খালের ২০ কিলোমিটারের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।