সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কলারোয়ায় রাতের আঁধারে পেট্রলের আগুনে শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও তাদের শিশু কন্যাকে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে।
রোববার (২৮ মে) ভোর রাতে উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের ফুটবল মাঠের পাশের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের কারণে বোন সুফিয়া খাতুনকে স্বামীর বাড়িতে না পাঠানোয় শ্যালক ও ভগ্নিপতির মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
অভিযুক্ত ভগ্নিপতি সবুজ হোসেন যশোরের শার্শা উপজেলার নারায়ণপুর পোড়াবাড়ি এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে। তিনি আফিল জুট মিলের শ্রমিক।
এ ঘটনায় সবুজ হোসেনের সহযোগী চন্দনপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান বিহারির ছেলে সোহাগ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে কলারোয়া থানা পুলিশ।
চন্দনপুর ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রোববার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে কাদের হোসেনের ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে জানালা দিয়ে কে বা কারা পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে দগ্ধ হলেও দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকায় তারা বের হতে পারেননি। ফলে আগুনে পুড়ে গুরুতর আহত হন কাদের হোসেন, তার স্ত্রী শারমিন ও কন্যা ফাতেমা। তাদের চিৎকার শুনে আশপাশের ঘুমন্ত প্রতিবেশীরা উঠে এসে জানালার রড ও তালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে। পরে তাদের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কাদের হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, বোনকে স্বামীর বাড়িতে পাঠানোকে কেন্দ্র করে আহত কাদেরের সঙ্গে তার বোনের স্বামী সবুজ হোসেনের কয়েকদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। এমনকি মোবাইল ফোনে কাদেরকে হুমকি-ধমকিও দিত সবুজ। বিষয়টি কাদের অতিসম্প্রতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যে একটি সালিশ-বৈঠকের কথা ছিল।
এ সব কারণে ভুক্তভোগী পরিবার ও প্রতিবেশীদের ধারণা, ভগ্নিপতি সবুজ হোসেন দরজায় তালা মেরে জানালা দিয়ে পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডালিম হোসেন বলেন, সোহাগ ও সবুজ পরস্পর বন্ধু ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বোনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে জানান, শনিবার সন্ধ্যায় সহযোগী সোহাগকে সঙ্গে নিয়ে চান্দুড়িয়া বাজার থেকে পেট্রল ও তালা কিনেছিল কাদেরের ভগ্নিপতি সবুজ।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সংবাদ পেয়ে সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আহত কাদেরের বোন সুফিয়া খাতুন (সবুজের স্ত্রী) বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সবুজের সহযোগী সোহাগকে আটক করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত সবুজ হোসেনকে আটকের চেষ্টা চলছে।
এদিকে কাদেরের বোন সুফিয়া খাতুন জানান, তার স্বামী সবুজ তাকে কারণে-অকারণে নির্যাতন করেন। এ কারণে তিনি স্বামীর ঘর করতে চান না। এসব নিয়ে তাদের ঝামেলা চলছিল।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আল আহমেদ আল মাসুদ জানান, কাদেরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্য দুজনের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৩
আরএ