ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয়করণসহ ১২ দফা দাবি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
জাতীয়করণসহ ১২ দফা দাবি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের

ঢাকা: শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ ও পূর্ণাঙ্গ পেনশন প্রদানসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সোমবার (২৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে জাতীয় পর্যায়ের ১০টি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।

দাবিগুলো হলো- শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ; সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও পেনশন প্রদান; ইউনেস্কো ও আইএলও’র সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষাখাতে জিডিপির ৬ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা; অনুপাত প্রথা বিলুপ্ত করে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের পদ বাতিল করে আগের মতো সহকারী অধ্যাপকের পদ চালু; এমপিও শর্ত পূরণকারী এবং বিধি সম্মত নিয়োগপ্রাপ্ত সব নন এমপিও এবং অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে পাঠদানকারী শিক্ষকদের প্যাটার্নভুক্ত করে এমপিওভুক্ত করা; অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আগের মতো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া এবং অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দুটি উচ্চতর স্কেল প্রদান; বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের অনুরূপ প্রদান করা; এমপিও জনবল কাঠামো-২০২১র ১১ দশমিক ১৩ ধারা বাতিল করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোপূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার; শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের চাকরি বিধিমালা-২০১২ দ্রুত বাস্তবায়ন ও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডিতে একজন কর্মচারী প্রতিনিধি রাখা এবং শিক্ষার্থীদের আনুপাতিক হারে কর্মচারীদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ পদোন্নতির ব্যবস্থা; শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আনুপাতিক হারে প্রেষণে নিয়োগ; কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি কারিগরি ও ভোকেশনাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং অবিলম্বে শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৮ ভাগ দায়িত্ব পালন করে আসছেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। ইউনেস্কো এবং আইএলও’র সুপারিশমালা মোতাবেক সমযোগ্যতা, সম-অভিজ্ঞতা ও সম-দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এক ও অভিন্ন বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব ইউনেস্কো ও আইএলও’র সভা সেমিনারে যোগদানের জন্য বিদেশ ভ্রমণে যান, বক্তব্য দেন এবং বিভিন্ন কমিটিতে তারা পদ গ্রহণ করেন। অথচ বাংলাদেশে ইউনেস্কো ও আইএলও’র সুপারিশমালা বাস্তবায়নে তারা উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন না।

তিনি আরও বলেন, ইউনেস্কো ও আইএলও’র অপর সুপারিশে আছে শিক্ষকদের সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যা শিক্ষক সমাজকে অবহিত করা হচ্ছে না। শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি অনেকবার প্রেরণ করেছি এবং ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি সভা আহ্বানের জন্য অনেকবার ব্যক্তিগতভাবেও অনুরোধ করেছি। আজ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকলাপের প্রতি খুবই হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা পৃথিবীতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থাও চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। তাছাড়া আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলনের পরিবর্তে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি ও প্রত্যাশাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় আছি। কিন্তু আমাদের এই আন্তরিকতাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা শিক্ষার উন্নয়নে সবসময় সরকারকে সহযোগিতা করে আসছি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো অচলাবস্থার সৃষ্টি হোক আমরা তা চাই না। তাই শেষবারের মতো আমরা শিক্ষা মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের ১২ দফা দাবির ব্যাপারে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। অন্যথায়, আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।

বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের আহ্বায়ক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম, মো. ফরিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. ফয়েজ হোসেন, মো. মহসীন রেজা, মো. আব্দুর রহমান, মো. হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।