ঢাকা, শনিবার, ০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নড়াইলের ‘কালিদাস ট্যাংক’ হয়ে গেল ‘লাল মিয়া’!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
নড়াইলের ‘কালিদাস ট্যাংক’ হয়ে গেল ‘লাল মিয়া’! ঐতিহ্যবাহী কালিদাস ট্যাংকের সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ চলছে

নড়াইল: নড়াইল জেলার সবচেয়ে পুরোনো পুকুরের নাম ‘কালিদাস ট্যাংক’।  বিউটিফিকেশনের নামে এর নাম বদলে ‘লাল মিয়া’ রাখা হয়েছে।

‘লাল মিয়া’ নড়াইলের গৌরব বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ডাক নাম।

নাম পরিবর্তনে স্থানীয়ভাবে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

তবে নড়াইলের পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলছেন, নাম বদল করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। কাজ শেষ হলে আগের নামই থাকবে।

পৌরভবনের পেছনে অবস্থিত শতবছরের পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হাতে নেয় নড়াইল পৌরসভা।

প্রায় ৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা।

তখন থেকেই জনমনে বিভ্রান্তি শুরু হয়, অনেকে প্রতিবাদও করেন। নাম পরিবর্তন চান না স্থানীয়দের অনেকে।

এ বিষয়ে সমাজসেবক শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, নাম পরিবর্তন করা অন্যায়। এরকম করলে কোনো ভালো মানুষ আর কোনো কাজ করতে আগ্রহ বোধ করবে না। আমরা দ্রুতই নাম পরিবর্তন করে ‘কালিদাস ট্যাংক’ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যে মানুষটা জনসাধারণের জন্য এতবড় একটা কাজ করে গিয়েছে, আজ তার নাম মুছে দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছে আমার জানা নেই। পুরাতন জিনিস সংস্কার বা সৌন্দর্যবর্ধন হতে পারে, তাই বলে নাম পরিবর্তন করতে হবে? নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা ছোট হয়ে যাচ্ছি।

সমাজসেবক ও স্থানীয় সাংবাদিক কাজী হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কাউকে বিকৃত করে বা ছোট করে কোনো উন্নয়ন হয় না। যার যা অবদান তা স্বীকার করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি শরিফ মুনীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এটি খুব ন্যক্কারজনক ঘটনা। কালিদাস কোনো আমজনতা ছিল না। এটা নড়াইল জমিদারদের একটা ঐতিহ্যর অংশ। ইতিহাস ঐতিহ্য মুছে দিয়ে কোনোদিন উন্নয়ন হয় না। এটা হীন মানসিকতার পরিচয়।

তবে নাম পরিবর্তন হয়নি এবং বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি বলে দাবি করেছেন নড়াইল পৌরমেয়র আঞ্জুমান আরা।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি পাস করার জন্য একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম প্রয়োজন ছিল। তখন ‘লাল মিয়া’ নাম দিয়ে পাস করানো হয়। তবে ‘কালিদাস ট্যাংক’ নাম মুছে ফেলা হয়নি। তড়িঘড়ি করে নামফলক করায় ভুল হয়েছে। সে কারণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটির পরিবর্তিত নাম ‘লাল মিয়া পন্ড অ্যান্ড কালিদাস ট্যাংক বিউটিফিকেশন প্রকল্প’।

তিনি আরও বলেন, ভুলের বিষয়টি জানতে পেরে আমি সঙ্গে সঙ্গে নামফলকটি পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছি। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, কাজ শেষ হলে পুকুরটি ‘কালিদাস ট্যাংক’ নামেই থাকবে।

এদিকে শুধু নাম নিয়েই নয়; পুকুরের মালিকানা নিয়েও পৌরসভা ও জেলা পরিষদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব, যা গড়িয়েছে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। দু’পক্ষই নিজেদের জমি বলে দাবি করছে।  

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দাবি, সিএসআরএস খতিয়ান মূলে জমির মালিকানা জেলা পরিষদের। অন্যদিকে পৌরমেয়র বলছেন, ১৯৭২ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মালিকানা তাদের।

নড়াইল শহরের প্রাণকেন্দ্রেই ‘কালিদাস ট্যাংক’- এর অবস্থান। ১৯০৭ সালে মহকুমা শহরের সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য জমিদার কালিদাস রায়ের ছেলে নরেন্দ্রভূষন রায় পুকুরটি খনন করেন। তৎকালীন যশোর জেলা বোর্ডের আওতায় ২০০ ফুট লম্বা এবং ১০০ ফুট চওড়া ২৫ ফুট গভীর পুকুরটি খনন করা হয়।  

ওই সময় মহাকুমা শহরে সুপেয় পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস ছিল এই কালিদাস ট্যাংক। মহিষখোলা মৌজার ৫২৮ নং দাগের ২ একর ৫ শতক জমিতে পুকুরটি অবস্থিত।

এ পুকুরের বিষয়ে লোককথা চালু আছে। বলা হয়ে থাকে, পুকুরের গভীরে একটি পিতলের ট্যাংক আছে, আর সেই ট্যাংকের সঙ্গে সংযোগ আছে চিত্রা নদীর। সেই কারণে ওই পুকুরের নাম ‘কালিদাস ট্যাংক’।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।