ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগান জাহিদ, দেন উপহারও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগান জাহিদ, দেন উপহারও

ঠাকুরগাঁও: পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ ভাগ বনভূমির প্রয়োজন। আর বনভূমি বিস্তারে বেশি করে গাছ লাগানো দরকার।

কিন্তু যে হারে গাছ কেটে নিধন করা হয়, সে হারে গাছ রোপণ করা হয় না।

পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকার কারণে আমাদের নানা দূর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে দীর্ঘদিন থেকে গাছ রোপণ করছেন ও মানুষের কাছে ফ্রিতে গাছ বিতরণ করে আসছেন জাহিদ ইকবাল।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আশ্রমপাড়া বাসিন্দা জাহিদ ইকবাল। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। রোববার থেকে বুধবার তার সারাদিনের কর্মব্যস্ততা কোর্ট চত্বরকে ঘিরে। তবে প্রতি বৃহস্পতিবার কোর্টের কাজ শেষ করে মানুষের হাতে গাছ উপহার হিসেবে তুলে দেন তিনি। আর শুক্রবার ও শনিবার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে রোপণ করেন গাছ। আর সময় পেলেই পরিচর্যা করেন রোপণকৃত গাছগুলো।

তবে এমনি গাছ উপহার পাওয়ার সুযোগ নেই। মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। একটি গাছ উপহার নিলে সঙ্গে নিজ অর্থায়নে রোপণ করতে হবে আরও তিনটি গাছ। রোপণের পর নিতে হবে গাছের পরিচর্যা।

জানা গেছে, অ্যাডভোকেট জাহিদ ইকবাল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি, স্নাতক ও রংপুর আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। গত ১৫ বছর ধরে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা জজ কোর্টে আইন পেশায় আছেন। আইনজীবী হলেও গাছের সঙ্গে রয়েছে তার সখ্যতা। গাছকে ভালোবাসেন তিনি। পরিবেশ রক্ষায় রোপণের পাশাপাশি বিতরণ করেন গাছ।

তার কাছ থেকে গাছ পাওয়া আরমান হোসেন বলেন, তিনি আমাকে দুইটি গাছ উপহার দিয়েছেন। সে গাছগুলোর পরিচর্যা সম্পর্কে প্রায় তিনি খবর নেন। এরকম উদ্যোগ আমাদের পরিবেশকে সবুজে ভরপুর করবে বলে আমি মনে করছি।

বৃক্ষপ্রেমী অ্যাডভোকেট জাহিদ ইকবাল বলেন, বনভূমি কমে যাওয়ার জন্য আমরা প্রকৃতিকে দায়ী করি। কিন্তু প্রকৃতি যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী আমরা। নিজেদের প্রয়োজনে আমরা নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলছি। কৃষিজমি লাগবে, বাড়িঘর বানাতে হবে, আসবাবপত্র বানাতে হবে, খেলার মাঠ বানাতে হবে এ জন্য আমরা সব গাছ কেটে ফেলছি। এ রকম করতে গিয়ে আমরা আমাদের উপকারের চেয়ে সর্বনাশ বেশি ডেকে আনছি। প্রয়োজনে আমরা গাছ কাটবো। কিন্তু গাছ কাটার পর নতুন করে গাছ না লাগানোর কারণে কত প্রজাতির গাছ যে এখন ধ্বংসের মুখে তার কোনো খবর নেই। এ ছাড়াও গাছ পাখিদের আশ্রয়স্থল। গাছ উজাড় হওয়ায় নানা প্রজাতির পাখিও বিলুপ্ত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মূলত মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ও গাছ রোপণে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। গাছ রোপণ আসলে অনেক সওয়াবের কাজ। একটি গাছ থেকে নানাভাবে মানুষ ও পশুপাখি উপকৃত হয়। আর যার মাধ্যমে উপকৃত হয় সে এর সওয়ার পায়। সেজন্য প্রতি বৃহস্পতিবার কোর্ট শেষ করে মানুষের মাঝে গাছ উপহার দেই। এ ছাড়াও সবুজ বনায়নে কোর্ট চত্বর, রাস্তার ধার ও রেলস্টেশনে গাছ রোপণ করেছি। এতে করে ভালো কাজের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি।

তার এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এটি আসলেই প্রশংসনীয় কাজ। আমরা এখন গাছ রোপণ না করে নিধন করছি। তবে এবারের বর্ষায় আমরা উদ্যোগ নিয়েছি বেশি বেশি গাছ রোপণের। আর প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এবারে সর্বনিম্ন একটি হলেও গাছ লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।