ঢাকা: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্প্রতি রাজধানীর বনানী থানায় এ মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) আল মামুন।
রোববার (১৮ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বনানী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় সিআইডি বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিআইডি।
এ মামলায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আলেশা মার্টের সহযোগী হিসেবে মঞ্জুর আলমের স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি। এছাড়াও মামলায় প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম এবং এস কে ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠানের মালিক আল মামুনকে আসামি করা হয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, আলেশা মার্টের পক্ষে কম মূল্যে পণ্য কেনার প্রচারণা চালিয়েছিল এস কে ট্রেডার্স। অপরদিকে প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন মঞ্জুর আলম। প্রস্তাবিত ব্যাংকটির পরিচালক হওয়ার জন্য আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান এই টাকা দিয়েছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে করা মামলায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এই মামলার আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করে পালাতে না পারেন, সে জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি জানায়, ২০২০ সালের ২৬ জুলাই আলেশা মার্ট যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। পরে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইলেন্স নেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আলেশা মার্টের যাত্রা শুরু ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি।
যাত্রা শুরুর পর কম মূল্যে মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে বহু গ্রাহককে পণ্য না দিয়ে কিংবা টাকা ফেরত না দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে তারা টাকা পাচার (মানি লন্ডারিং) করেছে বলে জানায় সিআইডি।
সিআইডি বলছে, চারটি বেসরকারি ব্যাংকে আলেশা মার্টের চারটি ব্যাংক হিসাব থেকে ৪২১ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩১ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ কেনা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে এই সম্পদ কেনা হয়।
সিআইডি জানায়, মঞ্জুরুল আলমের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীর তথ্যে দেখা যায়, বেতন ও আনুষঙ্গিক বেতন মিলে মঞ্জুরের আয় ছিল মাত্র ১৩ লাখ ৯০ হাজার। অথচ সাত মাসের ব্যবধানে তিনি ৩১ কোটি টাকার সম্পদ কেনেন।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, কম মূল্যে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ আলেশা মার্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেড, আলেশা টেক লিমিটেড, আলেশা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লিমিটেড, আলেশা কার্ড লিমিটেড, আলেশা রাইড লিমিটেড, আলেশা ফার্মেসি লিমিটেড, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও আলেশা অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মামলায় সিআইডির কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, গ্রাহকের টাকায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় প্রায় দুই হাজার শতক জমি কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ২১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এসজেএ/এমজেএফ