ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্যোগ মোকাবিলায় ডিএসসিসিতে চালু হলো জরুরি পরিচালন কেন্দ্র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
দুর্যোগ মোকাবিলায় ডিএসসিসিতে চালু হলো জরুরি পরিচালন কেন্দ্র

ঢাকা: রাজধানীতে প্রাকৃতিকসহ যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পরিচালন কেন্দ্র (ইওসি) চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি)। সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলে এই পরিচালন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

এ সময় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক আরিফুর রহমানসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং সিলেট সিটি করপোরেশনে এই জরুরি পরিচালন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। যার অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক।

জানা যায়, এই জরুরি পরিচালন কেন্দ্র থেকে যে কোনো দুর্যোগের (সংকট, দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ) সময় পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

এই জরুরি পরিচালন কেন্দ্রের মধ্যে আরও চারটি কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হলো- নগর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, নগর উপাত্ত কেন্দ্র, নিরাপত্তা ও অন্তর্জাল পরিচালন কেন্দ্র এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।

নগর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ: এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে দুর্যোগের সময় সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। দুর্যোগকালীন সময়ে মোবাইল ফোন ও উন্নত প্রযুক্তির সব নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ অচল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ডিজিটাল মোবাইল রেডিও (ডিএমআর) নেটওয়ার্ক সচল থাকে। তাই দুর্যোগকালীন সময়ে যোগাযোগের জন্য বর্তমানে ৪০০টি ওয়্যারলেস ওয়াকিটকি সেট সিটি করপোরেশনের জরুরি সেবা সংশ্লিষ্টরা ব্যবহার করছেন।

এই নগর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের +৮৮০২২২৩৩৮৬০১৪ নম্বরে ফোন করে যে কেউ তাদের অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন বা তথ্য সেবা পেতে পারবেন।

নগর উপাত্ত কেন্দ্র: ডিএসসিসির কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে নগর উপাত্ত কেন্দ্র। এটি একটি অত্যাধুনিক ডাটা সংরক্ষণ সেন্টার। এই ডাটা সেন্টারের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১২৮ টেরাবাইট। যা ৩০০০ টেরাবাইট পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব। এছাড়া এই ডাটা সেন্টারে ১০০০ ড্রাইভ সাপোর্ট রয়েছ।

নিরাপত্তা ও অন্তর্জাল পরিচালন কেন্দ্র: এখান থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্ক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র: নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নগর ভবনসহ সিটি করপোরেশনের সব স্থাপনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

জরুরি পরিচালন কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আজকে আমরা  দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করতে পেরেছি। এজন্য আমি খুবই আনন্দিত। আজ দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পরিচালন কেন্দ্রসহ পাঁচটি কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পেরেছি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে রূপকল্প দিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে স্মার্ট ঢাকা গড়ার একটি নতুন ধাপে আমরা উন্নীত হতে পেরেছি। এই জরুরি পরিচালন কেন্দ্র অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলার তাৎক্ষণিক তথ্যগুলো আমরা দেখতে ও জানতে পারব। যেমন- এখন যদি বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও ভূমিকম্প হয়, সেই তথ্যটি আমরা তাৎক্ষণিক পেয়ে যাব। তেমনি বন্যা ও আবহাওয়াসহ যে কোনো দুর্যোগের তথ্য আমরা এই পরিচালন কেন্দ্রে পেয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু দুর্যোগ অত্যন্ত জরুরি বিষয়, এজন্য তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কী জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে, বা কী জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেগুলোর বিচার, বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা কিন্তু এখানে বসেই আমরা করতে পারব। সুতরাং আজকে এই জরুরি পরিচালনা কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম। এখন থেকে আমরা এই পরিচালন কেন্দ্রের মাধ্যমে যে কোনো দুর্যোগ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যক্রমগুলো এখান থেকে পরিচালনা ও তদারকি করতে পারব।

মেয়র বলেন, আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯ জন কাউন্সিলরের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থায়ী কমিটি গঠন করেছি। দুর্যোগ পরবর্তী সভা করেছি। সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠসহ যে খোলা জায়গাগুলো রয়েছে, সেগুলো জিআইএস ম্যাপের মাধ্যমে সেগুলো চিহ্নত করা হয়েছে। আমরা সেগুলো ব্যবহার করব। যাতে দুর্যোগের সময় এলাকাবাসী সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। পরবর্তীতে যাতে সেখান থেকে আমরা উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি।

তিনি বলেন, এবার পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম এই জরুরি পরিচালন কেন্দ্র থেকে পরিচালনা করব। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও আমরা এখান থেকে পরিচালনা করতে পারব। এর বাইরেও সব ধরনের কার্যক্রমে এই জরুরি পরিচালনা কেন্দ্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক গঠনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তাদেরকে আমরা জরুরি প্রশিক্ষণ ও মহড়া দেব। যাতে তারা যে কোনো দুর্যোগে তাৎক্ষণিক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ ও ব্যবস্থা নিতে পারেন।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ব্যাপক কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব নিয়ম-শৃঙ্খলা পালন করা হয়, সেসব বিষয়ে দক্ষ ও পারদর্শী হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছি। এভাবে সামগ্রিক দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি আমূল পরিবর্তন আমরা ঘটাতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।