ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তি পেলেন ফাঁসির দণ্ড রহিত হওয়া সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২৩
মুক্তি পেলেন ফাঁসির দণ্ড রহিত হওয়া সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা 

কুমিল্লা: কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র সাহা অবশেষে রোববার (২ জুলাই) কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।  

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ফাঁসির দণ্ডাদেশ রহিত হওয়ার পর তিনি যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করেন।

৫ বছর ৭ মাস সাজা রেয়াত হওয়ায় দীর্ঘ ২৪ বছরের কারা জীবনের অবসান হলো এ মুক্তিযোদ্ধার।  

জানা যায়, উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র সাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র। হত্যা মামলা দায়ের করার পর ওইদিন সন্ধ্যায় দেবিদ্বার থানা পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখাল চন্দ্র সাহাকে গ্রেপ্তার করে। নেপাল চন্দ্র পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখাল চন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেন।  

এরপর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখাল চন্দ্রের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৩ এপ্রিল জেল কর্তৃপক্ষের চিঠি পায় তার পরিবার। পরের দিন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড রহিত করার দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও। পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতিকে এ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড মওকুফের জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রপতি তা রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভ্যর্থনা জানান আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির চেয়ারম্যান, কুমিল্লা জেলা সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুর রহমান জুয়েল, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন, প্রচার সম্পাদক শাহ পরান সিদ্দিকী তারেক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।  
এ সময় মুক্তিপ্রাপ্ত রাখাল চন্দ্র তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ফাঁসি নিশ্চিত জেনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। সাংবাদিক সমাজ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চেষ্টায় আমার ফাঁসি রহিত হয়। আমি নব জীবন লাভ করি। একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য মানুষের ভালোবাসা দেখে আমি এটাই বুঝেছি যে, ৭১ এ যুদ্ধে গিয়ে ভুল করিনি।

আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি মেনে নিতে পারিনি বলেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম। আজ সেই আন্দোলন পূর্ণতা পেল। আমরা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র সাহার সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসন চাই।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।