ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে পুলিশ সদস্য ও চলাচলরত যানবাহন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছেন আন্দোলনরত ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বর থেকে পুলিশ আন্দোলনরত ব্যবসায়ীদের সরিয়ে সড়ক খুলে দিলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন।
এতে বেশ কয়েকটি যানবাহনের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। সড়কে চলাচলরত পথচারীদেরও দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
দুপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করে ঢাকা গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করেন উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এরপরই ব্যবসায়ীরা সড়কে অবস্থান নেন
সিলগালার প্রতিবাদে গুলশান শপিং সেন্টারের সামনের সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। সড়ক অবরোধের কারণে গুলশান, বনানীসহ এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ আন্দোলনরত ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে আন্দোলনরত ব্যবসায়ীরা চারদিক থেকে পুলিশ ও চলাচলরত যানবাহনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে মার্কেট কমিটি?
আন্দোলনরত গুলশান শপিং সেন্টারের রাইছা ফেব্রিকসের কর্মচারী ইব্রাহীম বলেন, আমাদের মার্কেট সিলগালা করার জন্য ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। ১৭ দিন বাকি থাকতেই আজ সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে মার্কেট সিলগালা করে দিয়েছে। আমরা মার্কেট কমিটির ভরসায় ছিলাম, তারা মার্কেট বন্ধের আগে আমাদের কিছু একটা ব্যবস্থা করবে। কিন্তু মার্কেট কমিটি বিক্রি হয়ে সন্ত্রাসী লোকজন এনে আজকে আমাদের বের করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই মার্কেট যদি ভেঙে ফেলা হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব? আমাদের তো আর কোনো আয় নেই। আমরা পথে বসে গেলাম। আমাদের পুনর্বাসন না করে এভাবে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা আন্দোলনে নেমেছি।
জুয়েল মৃধা নামের আরেক আন্দোলনকারী বলেন, মালিকপক্ষ থেকে একজন কর্মচারীকে না করতে হলে তিন মাসের বেতন দিতে হয়। আজকে হঠাৎ মার্কেট বন্ধ করে দিলে আমরা কই যাব?
মিশন কম্পিউটারের কর্মচারী রাশেদ বলেন, আমরা সকালে খাবার নিয়ে আসছি সেটাও বের করতে পারিনি। আমাদের দোকানের কিছুই বের করতে পারিনি। সব জিনিস বাইরে। অনেক জিনিস চুরি হয়ে গেছে।
কী বলছে পুলিশ
গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, গুলশান-১ নম্বরে সিটি করপোরেশন একটি মার্কেট সিলগালা করার কারণে ব্যবসায়ীরা এখানে অবস্থান নিয়ে সড়ক দখল করে রাখেন। আমরা তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের দাবিদাওয়া জানানো এবং বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা তাদের সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা এই সময়ের মধ্যে কথা বলেও বিষয়টি সমাধান করতে পারেননি। তারা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাস্তায় অবস্থান করছিলেন। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, তাই আমরা তাদের বেশিক্ষণ রাস্তা বন্ধ করে রাখতে না দিয়ে কিছুটা প্রেশার দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।
আন্দোলনকারীদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।
যা জানা গেল ডিএনসিসি থেকে
শপিং সেন্টার সিলগালা করার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে মার্কেট তালাবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কী জন্য করা হয়েছে, তা পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট একটি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে ঢাকা উত্তর উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি মার্কেট অনিরাপদ। যেকোনো সময় মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। তার মধ্যে গুলশানের এই মার্কেট অন্যতম।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় আইন মেনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ থেকে গত রোজার আগে থেকে মার্কেটের দোকানদারদের চলে যেতে বলা হয়েছিল। তারা এক মাস সময়ও চেয়েছিলেন। কিন্তু মার্কেট থেকে তারা সরেননি। সম্প্রতি বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমও মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, যেকোনো সময় এই মার্কেটে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে; ঘটতে পারে মানবিক বিপর্যয়। এ কারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়ম মেনে তালাবদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
এজেডএস/জেডএ/এসসি/আরএইচ