ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালান তিনবারের ইউপি সদস্য এখলাছ

আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালান তিনবারের ইউপি সদস্য এখলাছ দোকানে কাপড় ইস্ত্রির কাজ করছেন ইউপি সদস্য মো. এখলাছ মিয়া

নেত্রকোণা: কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালান নেত্রকোণার মদন উপজেলায় তিনবারের ইউপি সদস্য মো. এখলাছ মিয়া (৫০)। এ কাজের ফাঁকেই এলাকায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

 ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সুখ-দুঃখের খবর জানতে বাড়ি বাড়ি যান এবং তাদের বিভিন্ন সেবা করেন।

মদন উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের বিপরীতে একটি মার্কেটে কাপড় ইস্ত্রির কাজ করেন এখলাছ মিয়া।  

এখলাছ মিয়া উপজেলার চানগাঁও ইউপি’র চানগাঁও চকপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য। চানগাঁও গ্রামের মৃত সুরাফ আলীর ছেলে তিনি। গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে কাপড় ইস্ত্রির কাজ করে ও অন্যে জমি বর্গায় চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছেন এখলাছ। স্ত্রীসহ এক মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে এ ইউপি সদস্যের সংসার।  

এখলাছ মিয়া জানান, নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই কাপড় ইস্ত্রির কাজ করেন তিনি। তখন এলাকার সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনে তার জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা জাগে। এরপর ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। তারপরও কাপড় ইস্ত্রির কাজ বাদ দেননি। কারণ এটাই তার পেশা এবং উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন।  

২০১১ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে অবশ্য হেরে যান এখলাছ মিয়া।  তবে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ২০১৬ সালে ও ২০২২ সালের নির্বাচনে তাকে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার নির্বাচিত করেন। এখনো তিনি ইস্ত্রির কাজ করেই সংসার এবং ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, এখলাছ মিয়ার একমাত্র মেয়ে ফারজানা আক্তার মদন সরকারি হাজী আব্দুল আজিজ খান ডিগ্রি কলেজে থেকে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। ছেলে শরীফ এ বছর উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর টি আমিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ছোট ছেলে আরিফ মিয়া একই বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। এখলাছ মিয়ার কোনো কৃষিজমি নেই। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বসত ঘরে স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। কাপড় ইস্ত্রি করে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসার চালান।

চকপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নজুফা আক্তার বলেন, বিনা টাকায় আমাকে খাদ্য সহায়তার ভিজিডি কার্ড দিয়েছেন মেম্বার এখলাছ মিয়া। আমরা অনেক গরিব। আগে আমার শাশুড়ি বিধবাভাতা পেতেন। এখন আমি প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছি। আমাদের এই ইউপি সদস্য গরিব মানুষের জন্য কাজ করছেন।

ইউপি সদস্য এখলাছ মিয়ার স্ত্রী ইসরাত জাহান পান্না বলেন, আমার স্বামীর টাকাপয়সা নেই। কিন্তু তিনি গরিবের সেবা করার জন্য ইউপি সদস্য হয়েছেন। মানুষের কাজ করতে গিয়ে আয় রোজগার কম হয়। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আমার স্বামী মানুষের ভালোবাসায় তিনবার মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি যেন মানুষের ভালোবাসার সঠিক মূল্যায়ন ও সেবা দেন সেই জন্য আমিও তাকে উৎসাহিত করি।

ইউপি সদস্য এখলাছ মিয়া বলেন, মানুষের ভালোবাসায় তিনবার মেম্বার নির্বাচিত হয়েছি। সাধ্যমতো পাশে থেকে মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করছি। কিন্তু নিজের পরিবার ও ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ মেটাতে ৩০/৩৫ বছর যাবৎ কাপড় ইস্ত্রির কাজ করে আসছি। নির্বাচন চলাকালীন সময়ও দিনের বেলা ইস্ত্রির কাজ করেছি রাতে ভোটারদের কাছে গিয়েছি। আমার ওয়ার্ডের ভোটাররা আমার প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়ে বারবার নির্বাচিত করেছেন সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আমি কাজ করার চেষ্টা করছি। আমি চকপাড়ার সর্বস্তরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।  

ইউপি সদস্য এখলাস মিয়ার প্রশংসা করলেন চানগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল আলম তালুকদারও।  

তিনি বলেন, আমি তিনবার চেয়ারম্যান হয়েছি ওই তিনবার এখলাছ মেম্বার হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ অনুযায়ী ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বিতরণ করছেন তিনি। এখলাছের কার্যক্রমে ওই ওয়ার্ডের মানুষ সন্তুষ্ট। কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালান তিনি। কাজের ফাঁকে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ নেন। অসচ্ছলতার মধ্যেও এখলাছ মিয়া মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দারিদ্রতার মধ্যে থেকেও নিঃস্বার্থভাবে জনপ্রতিনিধিত্ব করার নজির কম। তিনি যেমন জনপ্রতিনিধি পাশাপাশি তিনি জীবিকার জন্য কাপড় ইস্ত্রি করাও ছাড়েননি। তিনি একজন উদ্যোমী। তিনি বর্তমান সমাজের জন্য এক বড় দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮,  ২০২৩
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।