ঢাকা: যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে মনে করেন, তারা উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে তাকান না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে অধিবেশনে জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল–২০২৩ পাসের আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী তার বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত দেওয়া সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের কঠোর সমালোচনা করেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। এদেশের জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে। কিছু মানুষ যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে মনে করে, তারা নিজেদের জনগণের গার্ডিয়ান মনে করে। কিন্তু কতটুকু জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
তিনি বলেন, সুশীল সমাজের লোকেরা নানা ডিকটেশন দেন। তারা দেশের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে তাকান না। তারা তাকান সুদূর পশ্চিমে। সেখান থেকে যে বাণী আসে, সেভাবে তারা এখানে ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রিভিউ পিটিশন করা হয়েছে গত সপ্তাহে তার শুনানি হয়েছে। উচ্চ আদালতের অবকাশ শেষে আবার শুনানি হবে। সেই শুনানিতে এর সমাপ্তি ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস। এখন বিচারকদের পদত্যাগের বিধানটি নেই।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমাদের ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন দরকার। সেজন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে। টি এন শেসনের (ভারতের সাবেক সিইসি) কমিশনের মতো একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন থাকবে, এটি আমরা আশা করি। মেরুদণ্ড সোজা করে তারা নির্বাচন করবে। সরকার নির্বাচনের সময়ে রুটিন দায়িত্ব পালন করে। এ নিয়ে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের লোকেরা বার বার জোর করে সংসদকে অকার্যকর, সংসদ চলে না- নানা কথা বলেন। এমনটি হলে তো নির্বাচন লাগে না। ভারতের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ কোনদিন প্রশ্ন করে না। তাহলে আজকের বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন কেন?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন সঠিকভাবে হতে যাচ্ছে, ভালোভাবে হবে। আমরা চাই ফ্রি-ফেয়ার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে, নিরাপত্তা পাবে। প্রধানমন্ত্রী এটি চান, দেশবাসী চায়, বিশ্ববাসীও এটি চায়। এর বাইরে আর কিছু হবে না। এটি সবাইকে মানতে হবে। কেউ যদি সিট না পায়, জোর করে সিট দেওয়া যায় না। প্রার্থী হতে স্বতন্ত্র সদস্যের ভোটারদের সমর্থন থাকার বাধ্যবাধকতা সংবিধানের ব্যত্যয়, এটি সংশোধনের প্রয়োজন।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি অস্পষ্টতা, আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ রয়েছে। অনেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কখন ও কীভাবে নির্বাচন হবে- এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার দাপটে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে জনের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে অধিকাংশ জায়গায় আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। সেখানেও জনমতের প্রতিফলন হয়নি। সংসদে বিল পাস হয়েছে দলির যার, জমি তার। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্রের এই মালিকেরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা দলিল নিয়ে বসে আছে, কিন্তু মালিকানা তাদের হাতে নেই। সোনার বাংলার গণতন্ত্র আজ কোথায় যাচ্ছে?
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন নিয়ে একটি মানসিক সমস্যা হয়। যারা নির্বাচিত হন তাদের কোনো নির্বাচনী এলাকা আছে কি না, বিষয়টি তারা বুঝতে পারে না। এ নিয়ে তারা নিজেরাও বিব্রতবোধ করেন। নির্বাচনে নারীদের বেশি সংখ্যক নমিনেশন দেওয়ার বিষয়টির বাধ্যবাধকতা দেখতে হবে।
এদিকে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল–২০২৩’ পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।
বিলে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের জামানত হবে ২০ হাজার টাকা। বিদ্যমান আইনে সংরক্ষিত আসন শূন্য হলে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আছে। সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। বিলে আসনশূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নারী আসন বণ্টন পদ্ধতিতেও সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
এসকে/আরএইচ