ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হদিস নেই ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংস্কারের দেড় কোটি টাকার 

এইচ এম নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৩
হদিস নেই ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংস্কারের দেড় কোটি টাকার  ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবন

ঝালকাঠি: প্রতিবছরই বরাদ্দ আসে বিদ্যালয়টি সংস্কারের নামে। কিন্তু সেই বরাদ্দের টাকা যেন সংশ্লিষ্টদের উপার্জনের ভিন্ন মাত্রায় পরিণত হয়।

তাই সংস্কারের নামে বরাদ্দ আসে, মেয়াদ শেষ হলে ভাউচার দিয়ে টাকাও উত্তোলন করা হয়। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় ফুঁসে উঠেছে ঝালকাঠি সচেতন মহল।  

যে বিদ্যালয়ের ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ৫ বছরে মেরামত ও আসবাবপত্র ক্রয় বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।  

এদিকে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগই বলছে ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি ক্লাস দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে। বছর বছর বরাদ্দের সোনার ডিম খেলেও দৃশ্যমান নেই কাজ।

অভিযোগ উঠেছে এসব টাকার অধিকাংশই লোপাট হয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে সংস্কার কাজেই বরাদ্দ টাকা ব্যয় দেখাচ্ছে। এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি ক্লাস রুম দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ। তাই প্রশ্ন উঠেছে প্রতি বছরের বরাদ্দের টাকা কোথায় গেল।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয় ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সংস্কার বাবদ বরাদ্দ আসে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। একই খাতে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্দের পরিমাণ ২২ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আরও ২০ লাখ টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এছাড়াও আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ২০১৮ সালের আগে বরাদ্দের কোনো তথ্য নেই এ দপ্তরে। এমনটাই জানান দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী তৈয়বুর রহমান।

পুরো ভবনটি ঘুরে দেখা যায়- একদিকে অধিকাংশ রুমে নাম মাত্র সংস্কারের বালুর প্লাস্টার খসে যাচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষার পানি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ভিজে ভবনটির ধারণক্ষমতা কমছে। ফলে প্রায়ই প্লাস্টার ও সুরকির গাঁথুনি খসে পরায় আতঙ্ক নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাস করতে হচ্ছে।  

অপরদিকে বিদ্যালয় ভবনের পিলারের পুরোনো রড মরিচা ধরে ক্ষয় হওয়ার কারণে ধারণক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা আতঙ্কে ক্লাস করছে। প্লাস্টার খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। টয়লেটের অবস্থা আরও খারাপ। দরজা নেই। কল নষ্ট। বর্ষার পানি পড়ে সবসময়।

বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ জানান, আমি দায়িত্বে থাকার সময় ২০১৯ সনে বিদ্যালয়টির সংস্কারের নামে কাজের কাজ কিছুই না হওয়ার কথা জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে বলেছিলাম। এতে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। বিদ্যালয়ের ভেতরে এলে বোঝা যায় কাজ না করে বরাদ্দ টাকা কি ভাবে লোপাট হচ্ছে। যৎসামান্য এবং নিম্নমানের কাজের বিষয়ে প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদার উভয় উভয়কে দোষারোপ করছে। দেড় কোটি টাকার সংস্কার কাজ হলেও দৃশ্যমান নেই।

বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক ফয়সাল হোসেন জানান, এখন তারা বলছে অন্য ভবনে ক্লাস নেওয়ার জন্য। তাহলে মূল ভবনে এতো টাকার কি কাজ হয়েছে। প্রকৌশল বিভাগ কাজের তদারকি করে না। এমনকি আমাদেরও কোনো কাজ বুঝিয়ে দেয় না। এরা এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত। এ কার্যালয়ের এক উপসহকারী প্রকৌশলী বেশি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। পাশের ভবনের সংস্কারের জন্য ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। অথচ এটির বাথরুম ব্যবহারের অনুপযোগী। বাথরুমের দরজা ভাঙা, প্লাস্টার করা হলেও রং করা হয়নি। বৃষ্টি হলে ছাদের পানি গাড়িয়ে নিচতলা পর্যন্ত আসে।

প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুস জানান, স্কুল ভবনটির সংস্কার কাজ পাচ্ছে এক ব্যক্তি। কি করে সম্ভব। তাই অনিয়ম বেশি হচ্ছে। আমাদের শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। পুরো ভবনটি ঝুঁকিতে থাকলেও ৫টি রুমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। গত ১৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী পরিদর্শনে এসে বরাদ্দের সঙ্গে কাজের মিল না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। এতো টাকার কাজ হলেও তিনি দৃশ্যমান দেখতে পাননি।  

এ কাজের ঠিকাদার মো. হৃদয় বলেন, আমি বিদ্যালয়টির দোতলার পশ্চিম পাশের ছাদসহ অন্য সংস্কার কাজ করেছি। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। অন্য পাশের কাজের দায় দায়িত্ব আমার নয়। তবে আমার কাজ এখনো চলমান। কিন্তু দরপত্রের বাইরে কিছু কাজ করানোর কারণে বিল না পাওয়ায় চলমান কাজ বন্ধ রেখেছি। সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারছি না। ছাদের কাজ কখনো দৃশ্যমান হয় না।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রতি বছর এতো টাকার কাজ হলেও দৃশ্যমান হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি এখানে যোগদান করার পর বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি। আমার নির্দেশনা ছিল যে অংশটুকু ধরব সেটা দোতালা নিচতলাসহ। এখন সেভাবেই হবে। কিছু মেরামত চলমান রয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রবেশ পথে নতুন তিনতলা ভবনটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমি পরামর্শ দিয়েছি এতো ঝুঁকির মধ্যে সেখানে কিছু ক্লাস রুম শিফট করতে। আমার আগের কাজ সঠিকভাবে হলো কিনা সেটা দেখার সুযোগ হয়নি। বিপদ যেকোনো সময় হতে পারে। তাই অন্তত ৯টা ক্লাস রুম শিফট করা যেতে পারে। ঠিকাদারের বাড়তি কাজ করার কথা ঠিক না। যেটা হয়েছে সেটা আমরা সমন্বয় করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।