খুলনা: খুলনা মহানগরের মুজগুন্নী মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ করতে সরকারের খরচ হয়েছিল ১১ কোটি টাকা। সেই অর্থ এখন পানির নিচে।
জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় সড়কের আশপাশের দোকানপাট ও বাড়ি ঘরও ডুবে গেছে। সড়কের কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু। পানি বন্দী এলাকার মানুষের ভোগান্তিও চরমে। এই অবস্থার সমাধান চাইছেন স্থানীয়রা।
গত ৫ মাস আগে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজগুন্নী মহাসড়কটি পুনর্নির্মাণ করে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। নগরের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে বয়রা বাজার হয়ে নতুন রাস্তা পর্যন্ত সড়কটি বিস্তৃত। প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কটি এর আগে সংস্কার হয় ২০১২ সালে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কের পুরোটাই খানাখন্দে ভরে যায়। জনগণের নিরাপত্তা, দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক উন্নতির চিন্তা করে কেসিসি সড়কের সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করে।
চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল সড়কটি সংস্কার শেষ হলেও ড্রেন নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। এদিকে, নিম্নমানের উপাদান দিয়ে কাজ করায় সুফলের চেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী প্রত্যেকের।
জানা গেছে, বয়রা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে নতুন রাস্তা পর্যন্ত ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ করে মেসার্স মোজাহার ও সাঈদ এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই অংশে ড্রেন নির্মাণ করছে মেসার্স আশরাফ বিল্ডার্স।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন সড়কের কিছু অংশে পিচ ঢালাই উঠে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের পাশে থাকা ড্রেনেজ লাইন দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি জমে গেছে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তায় যান চলাচল বিঘ্ন হয়। কোমর-হাঁটু পানির কারণে সড়কে আটকা পড়ে দীর্ঘ সময় পার করতে হয়েছে অনেককে। পদ্মার এপারের একমাত্র বিশেষায়িত শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, নেভি অ্যাংকরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, বিজিবির খুলনা সেক্টর সদর দপ্তর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে আসা যাওয়া মানুষদের সড়ক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রাস্তায় পানির স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় অনেকে মাছ ধরছেন। কয়েকটি জায়গা বিপজ্জনক হওয়ায় লাল পতাকা তোলা হয়েছে।
শামীম হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, মুজগুন্নী সড়কের শেষ হওয়া পুনর্নির্মাণ কাজের সুফল মেলেনি। আগেও যেমন ভোগান্তি ছিল এখনও তাই রয়েছে। পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই ফুলে ফেঁপে উঠে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে সড়কটিতে।
মুজগুন্নী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, সড়ক ও ড্রেনের কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। রাস্তার কাজের টাকা জলেই গেছে। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে ড্রেন চলে গেছে সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। ড্রেন পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা সময় বড় একটি খাল ছিল। অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব এলাকায় ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে সেখানকার ময়লা-আবর্জনা সরানো হয়নি। কোনো রকম কাজটি শেষ করে গেছে ঠিকাদার। যে কারণে জলাবদ্ধতা হয়। সেখানে মশা উৎপাদনের কারখানা তৈরি হয়েছে। নির্মাণ কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেননি। এই রাস্তা করে মানুষের কোনো লাভই হয়নি। বরং আগের চেয়ে দুর্ভোগ আরও বেশি।
সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাঈদ এন্টারপ্রাইজের (জেভি) কর্মকর্তা সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে সমস্যা ছিল তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তবে তা থাকছে না। বৃষ্টি থামলে আবার সংস্কার করে দেওয়া হবে। যা যা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সবই করা হয়েছে। এখন ড্রেনের চেয়ে রাস্তা নিচু হয়ে যাওয়ায় ড্রেনের পানি রাস্তায় আসছে। রাস্তার পানি ড্রেনে যাবে সেখানে ড্রেনের পানি রাস্তায় আসছে। একটু বৃষ্টি হলেই মুজগুন্নী সড়কে পানি জমে যায়। আগে ড্রেন দিয়ে যত পানি যেত এখন নতুন ড্রেনে তাও যায় না।
ড্রেন নির্মাণ কাজ করা ঠিকাদার নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগরের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল নম্বরে কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু সেটি বন্ধ।
এ বিষয়ে কেসিসির উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টি না গেলে ঠিক করা যাবে না। ড্রেনের কাজ এখনও চলমান। বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৩
এমআরএম/এমজে