ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জমি হাতিয়ে নিলেন জামাই, শাশুড়ির মানববন্ধন

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
জমি হাতিয়ে নিলেন  জামাই, শাশুড়ির মানববন্ধন

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে মেয়ের জামাই মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন শাশুড়ি রাজিয়া হক। জমি হাতিয়ে নেওয়া, নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে স্বজনদের নিয়ে তিনি এ মানববন্ধন করেন।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়। রেজাউল হক, রেশমা আক্তার, সাইফুল ইসলাম, তাহমিনা, ফাতেমা আক্তার, মুক্তা, বদরুল ইসলামসহ তার পরিবারের প্রায় ১৫-২০ জন আত্মীয়স্বজন ওই মানববন্ধনে অংশ নেন।

রাজিয়া হক তার বক্তব্যে বলেন, আমি রাজিয়া হক ৮৭ মধ্যপাড়া, সিকান্দার আলী সড়ক, ৪নং ওয়ার্ড মৌলভীবাজারের বাসিন্দা। জন্ম থেকে ওই ঠিকানায়, মায়ের নামে রেজিস্ট্রিকৃত বাসায় আমার বাবা, মা, স্বামী ও দুই সন্তান মো. রেজাউল হক ও উম্মে সালমা হকসহ বসবাস করে আসছি। ২০১৫ সালে বড় মেয়ে ঘোড়াখাল নিবাসী মরহুম মনো মিয়ার ছোট ছেলে মো. জাকারিয়াকে ভালোবাসে বিয়ে করলে তাদের দুজনকে আমার বাসায় আশ্রয় দেই।

তিনি আরও বলেন, আমার অসুস্থতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মেয়ে ও মেয়ের জামাই মো. জাকারিয়া জমি দখলের লোভে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আমার একমাত্র ছেলেকে নেশাখোর, জুয়াড়ি ও সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে। আমিও সরল মনে তাদের কথা ও ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে ছেলেকে ভুল বুঝি। একপর্যায়ে ছেলেকে বাসা থেকে বের করে দেই। ছেলের অনুপস্থিতিতে আমার শরীর আরও খারাপ হতে থাকলে পরে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে ১২ দশমিক ৩৫ শতক জমির শূন্য দশমিক ৫ শতক ছাড়া বাকি পুরো জমি আমার মেয়ে আমার কাছ থেকে হেবা দলিল করে নেয়। যা আমি পরে জানতে পারি। ওই হেবা ঘোষণার সময় মেয়ে ও মেয়ের জামাই ও তাদের ষড়যন্ত্রে সহায়তাকারী ছাড়া কোনো আত্মীয়, প্রতিবেশী, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিল না। যা হেবা ঘোষণার পরিপন্থী।

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রসঙ্গ তিনি বলেন, পরে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাই মো. পুরো জমি দখল করে নিতে চাইলে আমি বাধা দিলে আমার ওপর বিভিন্ন প্রকারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। মেয়ের জামাই মো. জাকারিয়া ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে খুব বেশি প্রতিবাদ করতে পারিনি। তবে বিভিন্ন সময় আমি স্থানীয় এমপি, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শহরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে আমার দুরবস্থার বিবরণ দিয়ে বিচারপ্রার্থী হই। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো নিপীড়নের মাত্রা বাড়তে থাকে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমি আমার মেয়ের জামাই জাকারিয়া মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হলে আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের কাছে আমার দুরবস্থার বিবরণ তুলে ধরি এবং মো. জাকারিয়াকে কমিটিতে কোনো পদ-পদবি না দেওয়ার অনুরোধ করি।

‘মানবেতর জীবনযাপন’ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড হলে এতে চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমার মেয়ে উম্মে সালমা হক ও মেয়ের জামাই জাকারিয়া। তারা আমাকে মারধর করে, হুমকি-ধামকি প্রদানসহ আমার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এমনি আমি খেতে বসলে মেয়ে আমার হাত থেকে খাবার প্লেট কেড়ে নিয়ে আমাকে ধাওয়া দেয়। বর্তমানে আমি নিজ বাসা থেকে আমার ছেলে ও প্রতিবেশীর বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে মানবেতর জীবনযাপন করছি।

রাজিয়া হকের ছেলে রেজাউল হক মানববন্ধনে বলেন, আমার মা রাজিয়া হক একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। আওয়ামী পরিবারের মেয়ে। আমার মায়ের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ জাকারিয়া করেছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার মায়ের এ জমি ছিল আমার নানির। নানি মারা যাওয়ার পর আমার মা এ জমির মালিক হন। মা এ জমি আমরা এক ভাই এক বোনের কারো মধ্যে ভাগভাটোয়ারা করে দেননি। কৌশল করে জাকারিয়া এ জমি হাতিয়ে নেয়।

মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মো. জাকারিয়া বলেন, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে এ মানববন্ধন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
বিবিবি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।