ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দিনাজপুর পৌর মেয়র সাময়িক বরখাস্ত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
দিনাজপুর পৌর মেয়র সাময়িক বরখাস্ত

দিনাজপুর: দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে কেন মেয়র পদ থেকে অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

 

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি চিঠিতে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়।

এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার দায়ে কনটেম্পট পিটিশন ৪৮/২০২৩ এর গত ১২ অক্টোবরের আদেশে মেয়রকে এক মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ অক্টোবর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম দিনাজপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে এক মাসের সাজা ভোগের জন্য জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।  

এজন্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ধারা ৩২(১)(খ)(ঘ) এবং ২ অনুযায়ী তাকে মেয়রের পদ থেকে অপসারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ধারা ৩১(১) অনুযায়ী কোনো পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে অপসারণ কার্যক্রম শুরু করা হলে অথবা ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় মেয়র কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থী অথবা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন না হলে সরকারের লিখিত আদেশের মাধ্যমে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার বিধান আছে। এ আইন অনুযায়ী ‘পৌরসভা বা রাষ্ট্রের স্বার্থ হানিকর কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত এবং অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ এর দায়ে তাকে মেয়র পদ থেকে অপসারণের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় তার মেয়রের দায়িত্বপালন করা এখন সমীচীন নয় বলে সরকার মনে করে। তাই তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।  

আরেক চিঠিতে তার জায়গায় দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কে মেয়র পদে দায়িত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  

সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বরাবর সংশ্লিষ্ট বিভাগ একটি চিঠি দিয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালত অবমাননার দায়ে আপনাকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে হয়েছে,  যা স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩২ ধারার পরিপন্থী। এ অবস্থায় ধারা ৩২(১)(খ)(ঘ) এবং (২) অনুযায়ী মেয়রের পদ থেকে অপসারণের বিধান রয়েছে। এজন্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানাতে আইনের ধারা ৩২(৩) অনুযায়ী আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। গত ৩ আগস্ট জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সমাবেশে বিএপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। যার ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় চার আইনজীবী আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার আবেদন করেন।

আবেদনকারী চার আইনজীবী হলেন হারুন অর রশীদ, মাহফুজুর রহমান রোমান, মো.মনিরুজ্জামান রানা ও শফিক রায়হান শাওন।

এরপর ১৭ আগস্ট মেয়রকে তলব করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ২৪ আগস্ট সকাল ৯টায় তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত অবমাননার জন্য জাহাঙ্গীরকে কেন শাস্তি দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে তাকে কারণ দর্শাতে বলেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি ওই ভিডিও অপসারণ করতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৪ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম।  

ওই দিন আদালত ১২ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন রেখে সকাল ৯টায় সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুসারে তিনি আদালতে হাজির ছিলেন।  

১২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ তাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও সাতদিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া সাতদিনের মধ্যে তাকে দিনাজপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।