নাটোর: প্রেমের সর্ম্পক ফাঁস করাসহ বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করায় প্রেমিকা মাহমুদা আক্তার বীথিকে (৩২) ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে প্রেমিক মো. জাহিদ হাসান সাদ্দাম (২৯)।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দিনগত রাতে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার তোফাকাটা মোড়ে আম বাগানে এ হত্যার কাণ্ড ঘটে।
পুলিশ এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামেন এবং ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার আহমেদপুর থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রেমিক মো. জাহিদ হাসান সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরিও জব্দ করা হয়।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অভিযুক্ত আসামি মো. জাহিদ হাসান সাদ্দাম বড়াইগ্রাম উপজেলার কামারদহ এলাকার মো. সোহরাব হোসেনের ছেলে। আর নিহত মাহমুদা আক্তার বীথি লালপুর উপজেলার বরমহাটি গ্রামের আমজাদ হোসেনের মেয়ে। মুক্তার জেনারেল হাসপাতালে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার দুইটি সন্তান রয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্র ও পুলিশ জানায়, মাহমুদা আক্তার বীথির সঙ্গে তার প্রথম স্বামীর দুই বছর আগে বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে বাবার বাড়িতে থেকে লালপুরে গোপালপুর মুক্তার জেনারেল হাসপাতালে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করে সন্তানসহ জীবনযাপন করতেন। প্রতিদিন কাজ শেষে বিকেলে বাবার বাড়ি ফিরতেন বিথী।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) অনেক রাত হলেও তিনি বাড়ি না ফেরায় তার বাবা মো. আমজাদ হোসেন মেয়েকে বিভিন্ন জায়গা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এতে কোথাও তার সন্ধান পাননি পরিবারের লোকজন। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে লালপুর উপজেলার গোপালপুর তোফাকাটা মোড় এলাকার রাস্তার পাশে ওই নারীর গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।
পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সূত্র আরও জানায়, প্রায় ছয়-সাত মাস আগে জমি রেজিস্ট্রি করার সময় আহাম্মেদপুর কামারদহ এলাকার সোহরাব হোসেনের ছেলে সাদ্দামের সঙ্গে বনপাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বীথির পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে ভালো লাগা। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সম্পর্ক চলে আসছিল।
এরই মধ্যে ভিকটিম মাহমুদা আক্তার বিথী প্রেমিক সাদ্দামকে বার বার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সাদ্দাম বিয়ে না করতে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকেন। এতে বিভিন্ন সময়ে ভিকটিম বিথী সম্পর্ক ফাঁস করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে সাদ্দামের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতেন। এতে সাদ্দাম বিরক্ত হন। একপর্যায়ে সাদ্দামের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ ও বিরক্তি থেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
পরে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাদ্দাম ভিকটিম বিথীকে কৌশলে ডেকে গোপালপুর পৌরসভার তোফাকাটা মোড়ে নিয়ে যান। পরে রাতে রাস্তার পাশে একটি আম বাগানে বিথিকে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে ফেলে রেখে যান। সেসময় সাদ্দাম তার ব্যবহৃত মানিব্যাগটি ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যান। পুলিশ সেই সূত্র ধরে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শরীফ আল রাজীব বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মো. জাহিদ হাসান সাদ্দাম হত্যার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা পুলিশের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন। তার দেখানো মতে ঘটনাস্থলের পাশের ঝোপ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।
লালপুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, অভিযুক্ত আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
আরএ