ঢাকা: “আমি ট্রেনের ‘জ’ বগির ২৯ নম্বর সিটে ছিলাম। আমার সামনে ৩০ নম্বর সিটে বাচ্চা কোলে নিয়ে ছিলেন এক নারী।
বলতে বলতে চোখের জল মুছছিলেন নুরুল হক ওরফে আব্দুল কাদের। তিনি ঢাকার তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণে বেঁচে গেছেন। আগুন ধরে গেলে ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েন আব্দুল কাদের।
পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচ তলায় ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নুরুল। সেখানেই সন্ধ্যায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার।
নুরুল হক ঢাকার একটি শিল্পগ্রুপের পরিবহন শাখার কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায় কেন্দুয়া উপজেলা এলাকায়। তিনি থাকেন হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি এলাকায়।
নুরুল হক বলেন, ‘নেত্রকোনা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নিরাপদেই আসি। সম্ভবত ক্যান্টনমেন্ট ও বনানী স্টেশন পার হওয়ার পর আমাদের বগির মাঝ থেকে আগুন ধরে যায়। তখন প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। এক পর্যায়ে ধীরে চলতে থাকা ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ি। এ কারণে মাথায়, কোমরে ও পায়ে আঘাত পাই। আহত অবস্থায় নাখালপাড়া রেললাইনের পাশে পড়ে থাকি, ওই অবস্থায় আমার সহকর্মীকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। ’
অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে নুরুল হক বলেন, ‘হতে পারে যাত্রীবেশে ট্রেনে কেউ আগুন দিয়েছে, তবে আমি আগুন দিতে কাউকে দেখিনি। এটাও নিশ্চিত ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে, আগুন লাগেনি। তাছাড়া ট্রেনে তো কত মানুষই বিভিন্ন রকম ড্রেস পরে ঘোরাঘুরি করে। বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেনটি থামলে আমাদের বগি থেকে দুই-এক জন নেমে যায়। তারপর ট্রেনটি কিছুদূর যাওয়ার পরই আগুন দেখতে পাই। ’
ভোর ৫টা ৪ মিনিটের দিকে ট্রেনটিতে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। তখন বাহিনীর তিনটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়। পরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বগি থেকে শিশুসহ চারজনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যেই ছিলেন নুরুল হকের ‘জ’ বগির সহযাত্রী নাদিয়া আক্তার পপি (৩৫) ও তার কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশু ইয়াসিন (৩)।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
এজেডএস/এইচএ/